তিন কবির কবিতা

প্রতিষ্ঠান
নিতাই প্রসাদ ঘোষ।
সোনাতোড় পাড়া, সিউড়ি, বীরভূম।
পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই
পরিশ্রম করতে অসুবিধাও নেই
কিন্তু পরিশ্রম করলেই কি সত্যকে পাওয়া যায়?
না- যায়না, পরিশ্রমের বিকল্প সত্য নয়,
মিথ্যাকেও তেমন চাপা দেওয়া যায় না।
আসলে, রাষ্ট্র তো একটা প্রতিষ্ঠান।
সকলে মিলে গড়ে তুলেছে আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান,
পুঁজিবাদের প্রতিষ্ঠান, জনবিরোধী প্রতিষ্ঠান
সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান আর দূর্নীতির প্রতিষ্ঠান।
আমরা সবাই যাই কোথায়!
মুখ আর মুখোশের লুকোচুরি,
বেঁচে থাকা না মরেই, চলেছি কোথায়?
দেশটার বাইরে তো আমাদের নেই কোন প্রতিষ্ঠান।

কবিতা, সে তো ঈশ্বরের কন্ঠ
কাজী নিজামউদ্দীন। দুর্গাপুর।
জল পড়ে পাতা নড়ে, ছোট নদী
ফাল্গুনের কাঞ্চন ফুল
চারাগাছ যেমন জল পেলে বাড়ে
কবিতা তেমনই জল; কেবল শুশ্রূষা দেয়।
মধুকবি শব্দের ঝর্ণায় শরীর ধুয়ে
কবিতা শেখালেন শব্দ স্নান শব্দ পান।
সেই মেয়েটি লুসি আর ইয়ারো নামের
সুন্দর জায়গাটি খুঁজে চলেছি।
এনক আর্ডেন কোথায় চলে গেল
সেই সব নাইটিংগেল চাতক আর স্কাইলার্ক
কবিতাই কেমন চিনিয়ে দিল।
ঈশ্বর অর্জুনকে যে ভাষা দিলেন
মোজেস ঈশ্বরকে যখন শুনলেন
চোখের সামনে হেরদ পাহাড়টি ভষ্মীভূত হল
ঈশ্বর এর পুত্রের কাছে দুটি টেষ্টামেন্টে
এল বাইবেলের দীর্ঘ কবিতার ক্যয়ার।
রসুল এর কাছে জিব্রাইল প্রতি রাত্রে
এলেন আর দিয়ে গেলেন আর এক
কবিতা; জীবন আর মৃত্যুর ওপারের কবিতা।
নানক সাহেব আর কবীর নামের ছেলেটিও
কবিতায় চিনিয়ে দিলেন ঈশ্বর
লালন সাঁই আর নদের নিমাই
আউল বাউল ফকির যত শুনেছেন
ঈশ্বরীয় ঈশ্বরী পাটনীর কন্ঠ।
আমাদের চেনা ইলিয়াড কিম্বা ওডিসি
অথবা জেন্দাবেস্তার না জানা সব অক্ষর
সবই তো কবিতায় ঈশ্বর আর
ঈশ্বর এ কবিতা।
তবুও গালিব তাকি মীর
আর আমার জীবনানন্দ
নজরুল কিম্বা সুকান্ত, সব ভাষা সব অক্ষর
আমাদের দিলেন উত্তরাধিকার।
জনম অবধি হম নিন্দে গোঁয়াওলু
আজও তাই পদ লিখি
আজও কবিতা দিয়ে পৃথিবী রচনা করি
ঈশ্বর যখন কবিতা লেখেন
তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ।

একটা হায়নার গল্প
মানু গৌতম। কোঁয়ারপুর। কাটোয়া।
তার পর সেই হায়নাটা
খরগোসকেও শেখাতে লাগে দেশ ভক্তি।
শেখায় রক্তহীন মৃত্যুর আবশ্যকতা।
প্রত্যেকের গলায় পরায় কবচ।
সে কবচ তৈরি হয় ধর্মের নামে।
তারপর হায়না ঘোষণা করে গর্বে অন্ধ হয়ে,
এ বনভূমি আমার
তোমায় থাকতে গেলে প্রমাণ চাই
প্রমাণ চাই অরণ্যের অধিকারের।
একে একে বাঘ হাতি হরিণ
সকলেই আত্মসমর্পন করে,
পাঠ নেয় ধর্মীয় দেশ ভক্তির
কিছু অসহায় গরু ছাগল
মেলাতে পারলো না তাল
তারা বন্দি হলো।
আসলে অপেক্ষা করতে লাগলো
রাজার খাদ্য হতে,
নিশ্চিত মৃত্যুর।
ত্রস্ত বনভূমি, প্রতিবাদের ক্ষমতা হারায়
বিশ্বাস করতেও ভয় পায়
গরু ছাগল সকলের শিকড়ে বনে।
এ বনের প্রতিটি ইঞ্চি
তার পিতৃ পুরুষের
স্মৃতি বহন করে।
এই গাছ জঙ্গল নদী নালা আকাশ
তার বিচরণ ক্ষেত্র, তার সমান অধিকার।
অত্যাচারেরও শেষ আছে, শেষ আছে মিথ্যার।
শেষে এক বাঘিনীর ঘটে ধৈর্য্যচ্যুতি
প্রশ্ন করে নেকড়েকে,
তোমার কি অধিকার জঙ্গলের
কে দিয়েছে রাজশক্তি
হায়না তো তৈরী ছিল না
বাঘিনী ও নাছোড়বান্দা
শেষে বেঁধে যায় লড়াই
এ লড়াই অধিকারের লড়াই
শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই
সমস্ত প্রাণীরা ভয়ে ও আতঙ্কে
একত্রিত হয় দূর্বিনীতের বিরুদ্ধে
নিমেষে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেকড়ের উপর।
মৃত্যু ঘটে আতঙ্কের, শোষণের
মৃত্যু ঘটে স্বৈরাচারের।
আর সমস্ত প্রাণীকুল
ফেটে পড়ে স্বাধীনতার আনন্দে
মুক্ত বনভূমির আনন্দে।
পিতৃস্মৃতি ফিরে পেয়ে,
মাটির গন্ধ বুকে নিয়ে আবার
বলে ওঠে এ বন আমার।
(যোগাযোগ- হোয়াটসঅ্যাপ- 9434312482 ই-মেইল- [email protected])