করোনা যুদ্ধে সামিল বাংলাদেশের পাঁচ খুদে
কিছু ঘটনা দেশ-কালের সীমারেখা অতিক্রম করে সার্বজনীন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের পাঁচ খুদে স্কুল পড়ুয়া এমনই একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক, তাদের কীর্তির কথা শোনামাত্র যে কেউ প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন তাদের।
কি এমন করেছে ওই পাঁচ খুদে?
ঘটনাটি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের। সোমবার দুপুরে সেখানকার জেলা প্রাশাসক আবু আলি মোহম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের হাতে পাঁচটি মাটির ভাঁড় তুলে দেয় স্থানীয় মিনা শিশু নিকেতনের প্রাথমিকের পাঁচ খুদে পড়ুয়া, মারশাফি, শামিম, রেজবি, মুক্তা ও সিনথিয়া। তারা জানায়, তাদের জমানো টাকায় করোনার সময়ে দুস্থ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হোক।
ভাঁড়গুলি ভেঙে দেখা যায়, জমানো টাকার মোট পরিমাণ ১ হাজার ৪২২ টাকা। টাকার অংকটা হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু এভাবে ‘লক্ষ্মীর ভাঁড়’ দিয়ে করোনা যুদ্ধে তাদের সামিল হওয়ার ঘটনায় আপ্লুত জেলা প্রাশাসক আবু আলি মোহম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, পাঁচ খুদের এই অবদান অনুপ্রাণিত করবে বড়দেরও।
বছরভর বাড়িতে বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনরা হাতে টাকাপয়সা দিলে তারা তা মাটির ভাঁড়ে জমিয়ে রাখে। বছর শেষে পছন্দের কিছু একটা কিনবে বলে। সেই সঞ্চয় যেভাবে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে দিল ওরা তার কোনও তুলনা হয় না। ওদের এই ভাবনা ছড়িয়ে পড়বে আরও অনেকের মধ্যে।
মারশাফি, শামিম, রেজবি, মুক্তা ও সিনথিয়া’রা জানায়, পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। পছন্দের জিনিস কেনার সুযোগ পরে আসবে। তার আগে করোনা থেকে সবাইকে বাঁচতে হবে। তাদের কথায়, ‘‘বাড়িতে বাবা-মা বলছেন, করোনার জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেকের। দেশের বহু মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। তাই আমাদের জমানো টাকা দিয়েছি।’’
তবে এই ঘটনার পিছনে স্কুলের অবদানও মনে রাখার মতো। শিক্ষকেরা সমাজ গড়ার কারিগর। বড় মানুষ হওয়ার বীজ খুদেদের মধ্যে বপন করে দেন তাঁরাই। মিনা শিশু নিকেতনের শিক্ষকেরা গত বছরের পয়লা বৈশাখ স্কুলের ১২৬ খুদে পড়ুয়ার হাতে সঞ্চয়ের জন্য মাটির ভাঁড় তুলে দেন। জীবনে সঞ্চয়ের গুরুত্ব কতটা সে সম্পর্কে বাচ্চাদের জানান শিক্ষকেরা। তারপর থেকেই ওই পড়ুয়ারা ভাঁড়ে টাকা জমাতে শুরু করে দেয়।
করোনার সময়ে দুস্থ মানুষদের সাহায্য করতে পড়ুয়ারা কিভাবে এগিয়ে আসতে পারে তা জানতে চাইলে সোমবার ওই পাঁচ পড়ুয়া জানায়, তাদের ভাঁড়ে জমানো টাকা তারা দান করতে চায়। তারপরেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে যান জেলা প্রশাসকের দফতরে। এর আগে ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট স্কুলের আট পড়ুয়া বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে ১ হাজার ৭৫০ টাকা জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে দিয়েছিল।
বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৮২। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বহু দেশের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে এগিয়ে চলেছে দেশটি। সেখানে এই খুদেদের ত্যাগ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মনোবল বাড়াবে বৈকি!
‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ বাংলাদেশের পাঁচ খুদে পড়ুয়া ফের সেকথা প্রমাণ করে দিল। আসুন আমরা যে যেভাবে পারি সাধ্যমতো করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হই। জয় আসবেই।