
যত দিন যাচ্ছে তত আধুনিক হচ্ছে দুনিয়া। পাল্লা দিয়ে ছুটছি আমরা। আধুনিকতার মোড়কে আসলে আমাদের সভ্যতা কি ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? ৫ জি পরিষেবা নিয়ে চর্চা শুরু হলে অনেকের মনে এই প্রশ্নটা জাগছে বৈকি! এমনকি উদ্বিগ্ন জাতিসংঘও (ইউনাইটেড নেশনস)।
ফাইভ জি আসলে কি? মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ফাইভ জি বলা হচ্ছে। এটা একেবারে নতুন একটি রেডিও প্রযুক্তি। সোজা কথায়, এর ফলে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট থেকে তথ্য ডাউন লোড এবং আপলোড করা যাবে। বর্তমান নেটওয়ার্কে অনেক সময় দেখা যায়, ডাউনলোডের সময় মাঝপথে থেমে যায়। বিশেষ করে যখন কোনও একটি এলাকায় একসঙ্গে বহু মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন সমস্যা বেশি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ফাইভ জি অনেক ভালো পরিষেবা দিতে পারবে। মনে করা হচ্ছে, চালক বিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য জানার জন্য ফাইভ জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ভিডিও কল আরও পরিষ্কার হবে। কোনও রকম বাধা ছাড়াই মোবাইলে ভিডিও দেখা যাবে। একটি ভালো মানের সিনেমা হয়তো এক মিনিটেই ডাউন লোড করা যাবে।
কিন্তু ইতিমধ্যেই নতুন এই প্রযুক্তির বিপদ নিয়েও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত বছরের (২০১৮) ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন খবরের কাগজে বিশেষ একটি খবর জায়গা করে নিয়েছিল। নেদারল্যান্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫ জি ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করার সময় সংলগ্ন একটি পার্কে প্রায় তিনশো পাখির মৃত্যু হয়। মনে করা হয়, ৫ জি প্রযুক্তির হাইরেডিয়েশন তরঙ্গের প্রভাবে গাছ থেকে পড়ে ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় পাখিগুলির। ‘ডাচ ফুড অ্যান্ড কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি অথরিটি’র তরফে তদন্তে জানা যায়, মৃত পাখিগুলি শরীরে কোনওরকম বিষ পাওয়া যায়নি। তবে, তাদের দেহে প্রচুর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের প্রমাণ মিলেছে।
৫ জি নিয়ে বিপদের কথা শুনিয়েছে জাতিসংঘও। আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকে। জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষযক সংস্থা, ওর্য়াল্ড মেটিরিওলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সর্বাধুনিক এই টেলিফোন প্রযুক্তি আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলিত ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ডব্লিউএমও-র নির্বাহী পরিষদের সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, ফাইভ জি প্রযুক্তি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে রীতিমতো হুমকি তৈরি করে চলেছে।
ডব্লিউএমও-র মুখপাত্র ক্লেয়ার নালিস জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেওয়ার জন্য আবহাওয়াবিদরা যে সব বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করেন, নতুন প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার কারণে সেগুলি হুমকির মুখে পড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগ। আবহাওয়া সতর্কতা বিভিন্ন বেতার সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত যা ফোরকাস্টিং সিস্টেমসে তথ্য পাঠায় যাতে আরও নিশ্চিত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে অবাঞ্ছিত রেডিয়েশনের প্রকোপে বিদ্যমান আবহাওয়া-পূর্বাভাস ব্যবস্থা প্রভাবিত হবে। এর ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিষয়ে আগাম সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি প্রশ্নের মুখে পড়বে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! গত ২০ অক্টোবর ৫ জি প্রযুক্তি চালুর লক্ষ্যে আরও এক কদম এগোল ভারত। দেশের মাটিতে প্রথম বারের মতো সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হল ৫ জি ভিডিয়ো কল। চিপ নির্মাতা সংস্থা কোয়ালকম এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের মাটিতে প্রথম ৫ জি ভিডিয়ো কল করে দেখালো সুইডেনের টেলিকম নির্মাতা সংস্থা এরিকসন। যার অর্থ দিনের আলোর মতো পরিস্কার। এ’দেশেও দ্রুত শুরু হতে চলেছে নতুন এই প্রযুক্তির পরিষেবা। আধুনিক সভ্যতার অহঙ্কারই একদিন ডেকে আনবে আমাদের পতন।