Bhoot Chaturdashi. ভূত চতুর্দশী
Bhoot Chaturdashi. ভূত চতুর্দশী. মূলত বাঙালি হিন্দুর উৎসব, কারণ বাংলা ছাড়া ভারতের অন্য কোনও রাজের হিন্দুরা সে ভাবে এই ভূত চতুর্দশী উদযাপন করে না। পশ্চিম ভারতে এই তিথিকে ‘নরক চতুর্দশী’ বলে। অনেকের মতে, ভুত চতুর্দশীর দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মা নিজ নিজ বাড়িতে নেমে আসেন। তাই তাদের আসা যাওয়ার পথকে আলোকিত করতে এই দিন সন্ধ্যায় ১৪ প্রদীপ জ্বলানো হয়।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এই দিন সন্ধ্যায় অশরীরী প্রেতাত্মারা বের হয়ে আসেন। তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতেই বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। তবে প্রচলিত মতটি হল, রাজা বলি সাধনবলে বলীয়ান হয়ে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জয় করে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছেন। বলির তাণ্ডব থামাতে দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে একটা উপায় করতে বলেন। তখন ভগবান বিষ্ণু বামন রূপে বলি রাজার কাছে এসে তিন পা জমি ভিক্ষা চান। বলি বিষ্ণুর এই চাতুরি ধরে ফেলেও না বোঝার ভান করে তিন পদ জমি দানে রাজি হলেন।
ভগবান বিষ্ণু তখন দু’পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে নিলেন। তারপর নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করে বলি রাজার মাথার উপর রাখলেন। বলিকে ঠেলে দিলেন পাতালে। সেই থেকে বলির জায়গা হল পাতাল। কিন্তু বলিরাজ সব জেনেও দান করেছিলেন বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন। বলা হয়, নরাকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী তিথিতে অনুচর ভূত, প্রেতদের নিয়ে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। তাদের দূরে রাখতে ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে, ১৪ শাক খেয়ে Bhoot Chaturdashi. ভূত চতুর্দশী. তিথি উদযাপন করে থাকে।
কী কী রয়েছে ১৪ শাকের তালিকায়?
শাক কেবলমাত্র কোনও গাছের বা লতার পাতা নয়। বৃহত্তর অর্থে পাতা, ফুল, ফল, নাল, কন্দ, ছত্রাক সবই শাকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত বলা যায়। তাই ওলের মত কন্দ খেলেও শাক খাওয়া হবে। আবার কাঁচাকলা সিদ্ধ, পটল সিদ্ধ বা বকফুল ভাজা, মানকচু সিদ্ধ বা লাউ-কুমড়ো ডাঁটা খেলেও সেটাও শাক খাওয়া।
কালীপুজোর আগের দিন আশ্বিন মাসের চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যায় বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। সঙ্গে ১৪ রকম শাক (choddo shak) খাওয়ার নিয়মও রয়েছে। ভেষজ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ১৪ শাকের মধ্যে রয়েছে ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং সুষণি। শাকগুলি প্রধানত তেতো। ফলে মুখ ও পাকস্থলীতে প্রচুর লালা ও উৎসেচক ক্ষরণ হয়। যা রোগ নিরাময়ে খুবই উপকারী। ঋতু সন্ধিক্ষণে এর চরম উপকারিতা রয়েছে।তবে ১৪ শাক নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে। আয়ুর্বেদ মতে, প্রাচীন বাংলায় ১৪ শাকগুলি ছিল পালং, লাল, সুষণি, পাট, ধনে, পুঁই, কুমড়ো, গিমে, মুলো, কলমি, সরষে, নটে, মেথি, লাউ অথবা হিঞ্চে শাক। এই সব শাক আজ কাল বিশেষ পাওয়া যায় না। তাই অন্য শাক দিয়ে ১৪ শাকের হিসেব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- সজনে পাতার অলৌকিক উপকারিতা
কেন খাবেন ১৪ শাক?
ভেষজ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে শাকের কোনও বিকল্প নেই। মূলত স্বাস্থ্যরক্ষার্থে ১৪ শাক খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। বর্ষা বিদায়ের পরে এবং নতুন মরসুমে পৌঁছে পেটের রোগ, কৃমির প্রকোপ, ক্ষুধামন্দের মতো অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মরসুম বদলের সময় প্রধানত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই এই শাক খাওয়া দরকার। এছাড়াও শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
কীভাবে রাঁধবেন?
সব শাক ভাল করে বেছে, ধুয়ে কুচি কুচি কেটে জল ঝরিয়ে নিন। আলু ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে নিন। বেগুন আলুর সাইজে ডুমো ডুমো করে কেটে রাখুন। এ বার কড়াইতে তেল গরম হলে রসুন, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। আলু দিয়ে হাল নুন দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজা হলে শাক, বেগুন এক সঙ্গে দিয়ে নুন দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন। শাকের জল টেনে সুন্দর ভাজা হলে নামিয়ে নিন।
১৪ শাকের বিস্তারিত উপকারিতা
লাল শাক রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই অ্যানিমিয়া যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য খুবই উপকারী লাল শাক। এছাড়া অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে লাল শাকে। এসব উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। গিমা শাক জন্ডিস, জ্বর, লিভারের অসুখ, সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাদে একটু তেতো বলে খেলে মুখের অরুচি সারে।
+ There are no comments
Add yours