হারিয়ে গিয়েছে ভূরকুণ্ডা গ্রাম, স্মৃতি বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে স্কুল
কালের গহীনে হারিয়ে গিয়েছে দুর্গাপুরের অদূরের ভূরকুণ্ডা গ্রাম। জিজ্ঞেস করলে অনেকেই আর আঙুল তুলে বলতে পারেন না, ওই যে, ওই গ্রামটা।
তবে গ্রামটির নামের অস্তিত্ব একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। এলাকার একটি হাইস্কুল রয়েছে ওই গ্রামের নামে। প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়গোড়িয়া গ্রামে রয়েছে ভূরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশন। সত্যি কথা বলতে, শুধু ওই স্কুলের নামেই আজও বেঁচে আছে একটি আস্ত গ্রাম!

এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বললে আজও জানতে পারা যায় ভূরকুণ্ডার ইতিহাস। কৃষিপ্রধান সম্পন্ন গ্রাম ছিল এই ভূরকুণ্ডা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজরা এলাকায় সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলে। গড়ে ওঠে অ্যারোড্রাম। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একে একে গ্রামবাসীরা গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। এক সময় জনশূন্য হয়ে যায় গ্রাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তাঁদের কেউ কেউ ফের গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু সমস্যার শেষ ছিল না। আশপাশে কোনও স্কুল নেই। কাছের স্কুল বলতে সেই প্রায় ১৫ কিমি দূরের উখড়া কুঞ্চবিহারী ইনস্টিটিউশন।
গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগ নেন স্কুল খোলার। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের পরিত্যক্ত অ্যারোড্রামের একটি ভগ্ন বাড়িতে ১৯৬০ সালে চালু হয় স্কুল। টানা ৩৭ বছর ধরে স্কুল চলে ওই বাড়িতেই। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। চোর ডাকাতের উপদ্রব বাড়তে থাকে। অনেকেই তখন গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। তখন বাইরে থেকে আসা শিক্ষকেরা স্কুল বাড়িতেই থাকতেন। একদিন স্কুল বাড়িতেও হানা দেয় চোরের দল। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি জানান, প্রাক্তন প্রয়াত শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র ঘোষালের কাছে তিনি গল্প শুনেছেন, চোরেরা চুরি করে তাঁকে প্রণাম করে গিয়েছিল। পরদিন নারায়ণবাবু বাকিদের বলেছিলেন, চোরেরা বেশ ভালো। ওরা পেটের দায়ে চুরি করে। ওদের কোনও দোষ নেই!
বড়গোড়িয়ায় নতুন বাড়িতে স্কুলটি উঠে আসে ১৯৯৭ সালে। ততদিনে ভূরকুণ্ডায় আর প্রায় কেউ থাকেন না। রয়ে গেছে শুধু বাড়ি, ঘর স্কুলের ভগ্নাবশেষ। বড়গোড়িয়ায় স্কুল উঠে এলেও স্কুলের নাম কিন্তু রয়ে যায় ভূরকুণ্ডার নামেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি বলেন, ভূরকুণ্ডা গ্রামের স্মৃতি বহন করেই এগিয়ে চলেছে বড়গোড়িয়ার ভূরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশন।