Chalamthang tour. সিকিম তো অনেকেই বেড়াতে যান। গ্যাংটক, রাভাংলা, পেলিং, এসব তো সবার কাছেই পরিচিত নাম। বছরভর ভীড় লেগেই থাকে এসব জায়গায়। সাউথ সিকিমে এমন একটি গ্রামের কথা বলব, যেখানে হয়তো গিয়ে দেখলেন, আপনি ও আপনার সঙ্গীরা ছাড়া বাইরের কেউ নেই। শহুরে কোলাহল তো দূরের কথা, রাস্তার গাড়ির শব্দও শোনা যায় না। শুধু দূরে পাহাড়ের নীচ দিয়ে খরস্রোতা তিস্তার বয়ে যাওয়ার অবিরাম শব্দ আর পাখিদের কোলাহল।
Chalamthang tour. চলুন ঘুরে আসি চালামথাং
সাউথ সিকিমের ছোট্ট গ্রাম চালামথাং। প্রকৃতির নিঃস্তব্ধতার মাঝে যাঁরা নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান, তাঁদের জন্য চালামথাংয়ের বিকল্প নেই। পর্যটকদের কাছে ততটা পরিচিত নয়। তাই ভিড় কম। প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে দু’তিনদিনের ছুটি নিয়ে এই গ্রামে ঘুরে আসতে পারেন। হোটেল নেই। থাকতে হবে হোমস্টেতে।
বারান্দায় বসে চারিদিকে পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করুন, সঙ্গে গ্রামের নিজস্ব খাবারের স্বাদ। দূরে অনেক নীচে দেখা যায় সিংতাম ও রানিপুলের পাহাড়ি গ্রামের ছবি। সবুজ পাহাড়ি উপত্যকার মধ্য দিয়ে তিস্তার আঁকাবাঁকা সর্পিল পথচলা। সকালে বেরিয়ে পড়তে পারেন গ্রাম ঘুরতে। চড়াই, উতরাই পেরিয়ে পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে। খেতে ফলছে অর্গানিক বেগুন, আলু, কুমড়ো, ফুলকপি, গাজর, সিম, মুলো সহ নানা সবজি। হোমস্টেতে খাবার রান্না হয় সেই সব সবজি দিয়েই। Chalamthang tour এর মজাই আলাদা!
কীভাবে যাবেন
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চালামথাংয়ের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি। গাড়ি ভাড়া গড়ে চার থেকে সাড়ে চারহাজার টাকা। হোমস্টের ঘরভাড়া গড়ে দেড়হাজার থেকে দু’হাজার টাকা। এছাড়া সারাদিনের খাবারের খরচ বাবদ জনপ্রতি গড়ে ছয়শো টাকা। আগে থেকে বলে রাখলে হোমস্টে থেকেই গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সোজা আপনাকে পৌঁছে দেবে হোমস্টেতে। স্টেশন থেকেও গাড়ি নিতে পারেন। তবে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হতে পারে কিছুটা।
শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে জঙ্গলের মাঝ দিয়ে সেবক রোড ধরে হু হু করে ছুটতে থাকে গাড়ি। জঙ্গল শেষ হলেই নজর কাড়ে তিস্তা পাড়ের সৌন্দর্য। দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সবজে রঙের জল বুকে নিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। নদী ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়। এর মাঝেই হঠাৎ যেন এসে হাজির হয় সেবক পাহাড়। এরপর শুধুই চলা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে। গাইডের ভূমিকায় তিস্তা নদী। ঘন্টাতিনেক পরে গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দেয় মনোরম এক পরিবেশের মাঝে। পাহাড়ের গা বেয়ে পিচ রাস্তা। দু’ধারে জবা, ধুতরা ফুলের গাছ। তবে ধুতরার আকার আমাদের এখানকার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বড়!
কোথায় থাকবেন
আর গাড়ি যাবে না। কারণ এবার পায়ে হেঁটে উঠতে হবে পাহাড়ের উপর। তবে সিঁড়ি আছে। হোমস্টের কর্মীরা আপনার সঙ্গে মালপত্র নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। সিঁড়ি দিয়ে চড়াই ভাঙতেই আপনার দফা-রফা। অথচ পাহাড়ের মানুষেরা আপনার ভারি ব্যাগ কি অনায়াসে পিঠের বাঁশ দিয়ে তৈরি ঝুড়িতে ভরে নিয়ে উপরে উঠে যান দ্রুত, তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। পথের ধারে ডুমুর গাছে যেন আমের থেকেও বড় বড় ডুমুর ঝুলছে। ওখানে সেগুলি হাতি ডুমুর নামে পরিচিত। প্রায় একশো সিঁড়ি বেয়ে তবে পৌঁছানো যায় পাহাড়ের এক ধারে থাকা হোমস্টেতে।
ঘরের দেওয়াল বাঁশের। সামনে ছোট্ট দাওয়া। প্রায় পাঁচ হাজার আটশো ফুট উচ্চতায় দক্ষিণ সিকিমের ছোট্ট সেই গ্রাম থেকে প্রকৃতির অপূর্ব নৈসর্গিক সৌ্ন্দর্য দর্শনের অভিজ্ঞতাই আলাদা। সামনের পাহাড়ের ভ্যালি। তারই বুক চিরে বয়ে চলেছে চঞ্চলা তিস্তা। আরও দূরে বরফে ঢাকা পাহাড়চুড়া, নাথুলা পর্বতশ্রেণি। গাড়ির শব্দ নেই। চিৎকার-চেঁচামিচি নেই। বাতাস ভরা সবুজ অক্সিজেনে। বিস্তৃত নীল আকাশ। সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের পাখির কলকলানি।
খাওয়া-দাওয়া
এবার আসি আহারের কথায়। সকালের ব্রেকফাস্টে রুটি, আলুর দম থেকে শুরু করে আরও নানান সবজি। দুপুরে কাঁসার থালায় ধুমায়িত দেরাদুন রাইসের ভাত। সঙ্গে কাঁসার বাটিতে গ্রামের খেতে উৎপাদিত অর্গানিক বিভিন্ন সবজির নানান নিরামিষ পদ। বাড়িতে তৈরি ঘি, বাড়িতে তৈরি করা বিশেষ ধরণের মশলা যা ঘি-ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে খেতে হয়। এছাড়া বেগুন ভাজা, ডাল, অ্যাভোকেডোর তরকারি, মাসরুমের তরকারি, আরও অনেক কিছু। শেষই হতে চায় না। রাতের খাবারেও এমনই প্রাচুর্যের ছড়াছড়ি।
প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য আদর্শ জায়গা চালামথাং। দুপুর গড়িয়ে কখন যে বিকেল হয়ে যায়, টের পাওয়া যায় না। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে ঝপ করে। আশপাশ ঢেকে যা্য় কুয়াশায়। একধাক্কায় তাপমাত্রাও নেমে যায়। গায়ে চাদর বা শীতবস্ত্র জড়িয়ে দাওয়ায় বসে এবার গরম গরম পকোড়া, সঙ্গে চা। অন্ধকারের মাঝে পাহাড়ের ঘরে ঘরে তখন দূরে দূরে জ্বলে উঠেছে আলো। দেখে মনে হয় যেন আকাশে তারার মেলা। রাত ৯ টা বাজতেই রাতের আহার শেষ করার তাগাদা চলে আসে।
খাওয়া শেষ করে দ্রুত চলে যেতে হবে গভীর ঘুমের দেশে। কারণ, পরদিন ভোরে আকাশ পরিস্কার থাকলে বহু দূরের পাহাড়ও দেখা যায়। দেরি না করে এরপর আপনি চাইলে গ্রামে পাইনের বনে হারিয়ে যেতে পারেন, ছোটখাটো ট্রেকিং সারতে পারেন এমনকি রংগীত নদীতে মাছ ধরাও উপভোগ করতে পারেন।
Chalamthang tour. দেরি করবেন না। এখনও সময় আছে। কে জানে, কিছুদিনের মধ্যে হয়তো চালামথাংয়েও অন্যান্য জায়গার মতো ঝকঝকে হোটেল গড়ে উঠতে শুরু করল, পাল্লা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটল আনুষঙ্গিক আর পাঁচটা বদ অনুষঙ্গের। তাই এখনই একবার ঘুরে আসুন সিকিমের সবথেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অর্গানিক গ্রামটিতে।
+ There are no comments
Add yours