জিন নিয়ে অনৈতিক কারিকুরির ফল পেলেন চিনের চিকিৎসক বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই

প্রবীণেরা বার বার বলে গিয়েছেন, ‘খোদার উপর খোদকারি’ না করতে। তাতে সমগ্র জীববৈচিত্রই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। বিপন্ন হতে পারে মানব সমাজ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সেরা হতে হবে, সবার সেরা। খ্যাতির শিখরে উঠতে হবে। সেজন্য যা হবে হোক, সব গোল্লায় যাক। মানব জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয় হোক। সেটাই করেছেন চিনের চিকিৎসক বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই। আশার কথা, শেষ পর্যন্ত সে দেশের সরকার বেআইনি কাজের দায়ে তাঁকে শাস্তি দিয়েছে।

মানব শরীরের ডিএনএ

কি করেছিলেন হে জিয়ানকুই? ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি ঘোষণা করেন, বিশ্বে প্রথম জিন পরিবর্তন করে শিশুর জন্ম দিয়েছেন তিনি। শরীরে এইচআইভি বা এডস সংক্রমণ হয় যে জিনের জন্য সেই জিন বাদ দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে তিনটি শিশু। যার দুটি যজম। এইচআইভি আক্রান্ত আটজন পুরুষ ও তাঁদের স্ত্রীদের ভলেন্টিরায় হিসাবে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর এইচআইভির জন্য দায়ী বিশেষ জিনটি বাদ দিয়ে ভ্রুণগুলি স্থাপন করেন স্ত্রীদের গর্ভে। শেষ পর্যন্ত জন্ম নেয় তিনটি শিশু। এর পরেই বিশ্বজুড়ে গেল গেল রব ওঠে। বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানী সমাজ চিকিৎসা নীতি লঙ্ঘনের দায়ে হে জিয়ানকুইয়ের শাস্তি দাবি করেন। তাঁরা জানান, যে পদ্ধতিতে এ’কাজ করা হয়েছে তা মোটেই নিরাপদ নয়। কোনও বিশেষ জিন ছাঁটতে গিয়ে পাশের জিনে কোপ পড়তে পারে। এর ফলে জিনের অপ্রত্যাশিত বদল বা ‘মিউটেশন’ ঘটে যেতে পারে। যা সমগ্র প্রজাতির জন্য বিপদের খাঁড়া নিয়ে হাজির হতে পারে। বিপন্ন হতে পারে গোটা মানব সমাজই।

বিশ্বের বহু দেশের মতো চিনেও মানব ভ্রূণের জিনে এমন বদল ঘটানো বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তা সত্বেও সেখানকার একটি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার হে জিয়ানকুই কিভাবে এমন কাজ করতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শেষ পর্যন্ত চিনের এক আদালতে মামলা দায়ের হয় তাঁর নামে। আদালতের বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছে, হে জিয়ানকুই ও তাঁর দুই সহযোগী চিকিৎসককূলের কলঙ্ক। চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা তাঁরা খুইয়েছেন। হে জিয়ানকুইকে তিন বছরের জেল ও তিন কোটি ইউয়ান জরিমানা করা হয়। এছাড়া দুই সহকারীর একজনকে দু’বছরের জেল ও এক কোটি ইউয়ান এবং আর একজনকে দেড় বছরের জেল ও পাঁচ লক্ষ ইউয়ান জরিমানা করা হয়।

কিন্তু তাতেই কি আতঙ্ক যাচ্ছে? অন্য কেউ গোপনে এ’কাজ অন্য কোথাও করছেন না তো? সরকারি নজরদারি রয়েছে নানাভাবে। তবু স্বস্তি নেই। হে জিয়ানকুই নিজে থেকে না বললে আদৌ কি বিষয়টি জানাজানি হতো? তবে আশার কথা একটাই। মানুষের খ্যাতির লোভ। খ্যাতির লোভেই হে জিয়ানকুই তাঁর গবেষণার কথা বুক বাজিয়ে বলেছিলেন প্রকাশ্যে। তাই ফের যদি কেউ এমন কান্ড ঘটানও তবু তা জানাজানি হয়ে যাবেই বলে মনে হয়। কিন্তু এসব করতে গিয়ে কোনওভাবে যদি মিউটেশন ঘটে যায়? তখন কি হবে?

আসলে বিজ্ঞান যত এগোবে ততই বাড়বে নতুন নতুন বিপদ। এটাই মানবজাতির ভবিতব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *