আমার তোমার ক্লেশ

আনন্দের মরসুম। উৎসবের মরসুম। বাঙালি দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো কাটিয়ে উঠেছে। এবার আপামর ভারতবাসী অপেক্ষা করছে কালীপুজো ও দিওয়ালির অপেক্ষায়। আর কালীপুজো বা দিওয়ালি মানেই আলোর উৎসব। পটকা, আতসবাজি, তুবড়ি, চড়কি, না জানি আরও কত বাজি-পটাকা ইত্যাদির আলো ও শব্দে চারিদিকে তৈরী হবে উৎসবের আমেজ। বাড়িতে বাড়িতে এলইডি আলোয় সেজে উঠবে চারিদিরক। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আলোয় ভরে উঠবে চারিদিক। উৎসবের মরসুমে মেতে উঠবে সকলে। উফ্! কি আনন্দ! গিফ্টে আসবে পটকা। বন্ধুরা একত্রিত হবে শুধু পটকা ফাটানোর জন্য। প্ল্যান শুরু হয়ে গেছে এখন থেকে।
আমার এত আনন্দ হচ্ছে না! থমকালেন? বিশ্বাস করুন। এই সবে আমারও আনন্দ হত এক সময়। আমিও মাতোয়ারা হয়ে উঠতাম। কিন্তু গত বছরের একটি ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমার বাস চারতলার ফ্ল্যাটে। টপ ফ্লোর। তাই ছাদে আমার বাগান তৈরী করেছি। সেটি আমার বড়ই পছন্দের জায়গা। সারাদিনের ক্লান্তির শেষে আমার বাগান আমার মনের আরাম। গত বছর কালীপুজোর রাত। ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তখন রাত ৮ টা হবে। আলোয় ‍আলোয় সেজে উঠেছে চারিদিক। গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে আলোর রোশনাই। ফানুস উড়ছে আকাশ জুড়ে। হঠাৎ নিশাচর পাখির একটা দল আমার মাথার ওপর পাক খেয়ে অন্য দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরে এসে অন্য দিকে চলে গেল। ওরা আর্তনাদের মতো শব্দ করছিল। বুঝতে পারছিলাম না কেন এরা এদিক ওদিক করছে। কিছুক্ষণ পর কয়েকটা চামচিকে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে গেল। আরও রাতে ১১ টা নাগাদ একই ভাবে উড়ে গেল পেঁচার দল।
অসহায় আমি শুধু দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি। ঘরে ফিরে লাইটগুলো খুলে ভরে রেখেছি। এবছর শুধু মোমবাতি জ্বালাবো। আসলে আমাদের সবার জানা দরকার, প্রত্যেক প্রাণীর শরীরে একটি ঘড়ি কাজ করে, যা ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ হিসাবে পরিচিত। ওই ঘড়ির ছন্দ মেনেই প্রাণীদের দৈনন্দিন জীবন চালিত হয়। মাত্রাতিরিক্ত আলোয় স্বাভাবিক জীবন বাধা পায়। পাখিদের জীবনচক্রে তার প্রভাব পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের প্রজনন। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয় জীববৈচিত্র এবং পরিবেশের। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের তাই পরামর্শ, অযথা আলোর পরিমাণ অবশ্যই কমানো দরকার। খুব ভালো হয় যদি আলোর উপরে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু কে করবে?
রাতের পাখিরা, ভালো থেকো তোমরা। জানি তোমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবে না। আলোয় চারিদিক ভাসাতে পারলেই হলো। তোমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায় যাক না…।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *