কোথাও শ্বশুর বিধবা পূত্রবধূর ফের বিয়ে দিলেন, কোথাও শাশুড়ি পূত্রবধূর মুখ চেয়ে মৃত স্বামীকে বাড়িতে আগলে রেখে বিয়ে দিলেন ছেলের

আধুনিক সমাজ নয়, চাই আধুনিক মন

আধুনিকতা কাকে বলে, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে একটা জায়গায় সবাই একমত, বহিরঙ্গের বিচার করে কাউকে সেকেলে বলে দেগে দেওয়া একেবারে ব্যাকডেটেড আইডিয়া। বাইরে থেকে দেখতে কেউ হয়তো সত্যিই সেকেলে, অথচ সেই তিনিই হয়তো মননে এগিয়ে আছেন আমার-আপনার থেকে কয়েক যোজন। তাঁদের এক একটা কান্ডকারখানায় মাথা নুইয়ে পড়তে বাধ্য।

গত কয়েকদিনে খবরের কাগজ, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’জনকে নিয়ে খুব চর্চা চলছে। দু’জনই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। একজন থাকেন দুর্গাপুরে। অন্যজন উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়ায়। দু’জনেই পঞ্চাশোর্ধ। কিন্তু মননে তাঁরা দু’জনেই ইয়ং। দুই মেয়ের জীবনের কথা ভেবে সামাজিক অন্তঃসারশূণ্য বিধিনিষেধ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেননি তাঁরা।

দুর্গাপুরের অজয় শাসমলের ছোট ছেলে উত্তমের আট বছর আগে বিয়ে হয় পূর্ব মেদিনীপুরের দেবশ্রীর সঙ্গে। বিয়ের তিন বছর কাটতে না কাটতেই মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেন উত্তম। ছেলে অন্তুকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন দেবশ্রী। কিন্তু অজয়বাবুর বয়স বাড়ছে। তাঁর অবর্তমানে বৌমা ও নাতির কি হবে ভেবে ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বৌমার ফের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন। গত ১১ ডিসেম্বর মন্দিরে বৌমার বিয়ে দিলেন। নিজের হাতে নিজের মেয়ের মতো করেই বৌমাকে সম্প্রদান করলেন বিয়েতে। অজয়বাবুর এমন উদ্যোগের প্রশংসা চলছে সব জায়গায়। বিধবা বিবাহ আজকাল হয়তো আর নতুন কিছু বিষয় নয়। তবে পৌঢ় শ্বশুর নিজের হাতে বৌমার বিয়ে দিচ্ছেন, সম্প্রদান করছেন, এটা সত্যিই উল্লেখ করার মতো।

ওদিকে বাদুড়িয়ায় এক মা শিরোনামে এসেছেন চরম বলিষ্ঠ ও সাহসী এক সিদ্ধান্তের জন্য। অলিরানী মন্ডলের ছোট ছেলের বিয়েও ছিল ১১ ডিসেম্বর। বিয়ের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আগের দিন বিকেলে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যান স্বামী অসিতবরণ। ব্যাস! রাত পোহালেই বিয়ে। আর তো হওয়ার নয়। ওদিকে এই খবর পাত্রীর বাড়িতে পৌঁছাতেই যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। কিন্তু সব বদলে দেন অলিরানী। জানান, ছেলের বিয়ে হবে। কারণ হবু বৌমা তো তাঁর নিজের মেয়ের মতোই। তাই ঠিক হয়, স্বামীর দেহ তিনি আগলে রাখবেন। শেষকৃত্য হবে না। ধুমধাম করে তো আর সম্ভব নয়। তাই মন্দিরে বিয়ে হবে। সেভাবেই বিয়ে হল দুজনের। তারপরেই শববাহী গাড়িতে করে নিমতলা শ্মশানের উদ্দেশ্যে দেহ বেরিয়ে গেল অসিতবরণের। স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুর পরেও সব ভুলে, দেহ বাড়িতে আটকে রেখে যেভাবে ছেলের বিয়ে দিলেন অলিরানী, তা এখন মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই জেনে গিয়েছেন। সবাই ধন্য ধন্য করছেন।

প্রশংসার পাশাপাশি অজয় শাসমল ও অলিরানী মন্ডলের আধুনিক মন নিয়ে আলোচনায় মেতেছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের ছড়াছড়ি। সমাজ ও সামাজিকতাই যে শেষ কথা নয়, তা ওই দুজনে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজেদের কাজের মধ্যে দিয়ে। মুখের বুলিতে, সাজপোশাকে বা আচার আচরণে নিজেদের আধুনিক প্রমাণ না করে যদি মনটাকে আধুনিক করে তুলতে পারা যায়, তাহলে সমাজের বহু সমস্যাই নিমেষে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। সেটাই প্রমাণ করে দিলেন দুজনে।   

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours