সোশ্যাল মিডিয়ার বিপজ্জনক পোস্ট থেকে প্রাণ গেল প্রায় তিনশো ইরাণির
ভাবতেও অবাক লাগে এক এক সময়। লাইক আর শেয়ারের লোভে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ইচ্ছা একটা কিছু ছেড়ে দেওয়ায় কতজনের কত ক্ষতি হচ্ছে তা ভেবেও দেখে না অনেকে। তারা শুধু নিজেদের পোস্টের লাইকের সংখ্যা গুণে, কতবার সেটি শেয়ার হয়েছে তা দেখে আত্মতুষ্টিতে মেতে ওঠে। এরা সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীর শত্রু। সবার উচিত সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বার্তার সোর্সটা কি, সেটি নিয়ে প্রথমে খোঁজখবর করা। তারপরেই সেটিকে ভরসা করা যায় কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু পৃথিবীর বহু মানুষেরই সেই সচেতনতাবোধ নেই। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে আত্মমগ্ন একদল অমানুষ।
সকালে টিভি দেখতে গিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। অর্বাচীনের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের যে কত ক্ষতি করছে তা একটি খবর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেল। করোনায় বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত তিরিশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই করোনা থেকে বাঁচতে মিথাইল অ্যালকোহল খেয়ে মারা গেলেন ইরাণের প্রায় তিনশো জন মানুষ। তাঁরা নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা দেখেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, মধুর সঙ্গে ইথাইল অ্যালকোহল মিশিয়ে খেয়ে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তারপরেই এই বিপত্তি।
করোনার বিরুদ্ধে আর পাঁচটা দেশের মতোই কোমর বেঁধে যুদ্ধ করে চলেছে ইরাণও। ইতিমধ্যেই সেখানে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। আতঙ্ক দেশজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা ভাইরাল হয়, করোনা আক্রান্ত একজন মধুর সঙ্গে ইথাইল অ্যালকোহল মিশিয়ে খেয়েছেন। তারপরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
ব্যাস! ইরাণের আইনে মদ খাওয়া বা মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। তবে সেখানে মিথাইল অ্যালকোহল পাওয়া যায়। মিথাইল অ্যালকোহল হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্পিরিট। এই স্পিরিট মূলত কাঠের আসবাবপত্র বার্নিশ ও রং করার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিষাক্ত। কোনও ভাবে শরীরে ঢুকলে বিপজ্জনক। অথচ ইরাণের অনেকেই করোনা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে সেই মিথাইল অ্যালকোহলই খেয়ে নেন। তার পরিণতি, প্রায় তিনশো মানুষের মৃত্যু। আরও অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হয়তো সেই মানুষগুলির একজনও করোনায় আক্রান্ত হতেন না। মৃত্যু তো দূরের কথা। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন বার্তাকে বিশ্বাস করে তাঁদের প্রাণ চলে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ার এই ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে অবিলম্বে সব দেশে কড়া আইন প্রণয়ন জরুরী। তা না হলে এই বিপদ থেকে বাঁচা মুশকিল। শাস্তি দেওয়া না হলে দিন দিন এই প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। বিপদে পড়তে হবে হাজার হাজার মানুষকে।
সমাজের এই শত্রুদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। এদের শাস্তি হওয়া খুব জরুরী।