আকাশবাণীর গান শুনে প্রতিদিন ভাগ্য বদলে যায় হাজার হাজার মানুষের?
আকাশবাণীর গান শুনে প্রতিদিন ভাগ্য বদলে যায় হাজার হাজার মানুষের? ভাবছেন ঠিক পড়লেন কী না? ঠিকই পড়েছেন। সত্যিই রোজ বহু মানুষের ভাগ্য বদলে যায় শুধু রেডিয়ো’র গান শুনে। নিজের চোখে তা দেখতে গেলে আপনাকে যেতে হবে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে। সেখানে গত প্রায় ৩৪ বছর ধরে রোজ সকালে বসছে অভিনব এক লটারির আসর!
মাধবগঞ্জে রাধা মদনগোপাল জিউয়ের মন্দিরের পাশে রোজ সকালে সবজি, মাছের বাজার বসে। হৈ হৈ করে দরাদরি করে বিক্রিবাটা চলে সকাল ৯ টা পর্যন্ত। কিন্তু ৯ টা বাজলেই বদলে যায় ছবিটা। সবাই শান্ত হয়ে যান। এই সময় শুরু হয় আকাশবাণীর গীতাঞ্জলি অনুষ্ঠান। ক্রেতা, বিক্রেতা সবাই রেডিয়ো হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন। সবার কান তখন গীতাঞ্জলীর গানে। কারণ, গীতাঞ্জলীর গান থেকেই মিলে যেতে পারে লটারির নগদ সাড়ে সাতশো টাকা!
বুঝতে পারছেন না কিছু? আচ্ছা বিশদে বলছি। স্থানীয় চারজন এই বিশেষ লটারির আয়োজক। টিকিটের মূল্য মাত্র ১ টাকা। রোজ এক হাজার টিকিটের উপর খেলা হয়। হাতে তৈরি টিকিটে লেখা থাকে কোনও একটি সিনেমার নাম। গীতাঞ্জলীতে সেদিন কারওর টিকিটে থাকা সিনেমার গান বেজে উঠলেই তিনি পেয়ে যান সাড়ে সাতশো টাকা। স্থানীয়রা জানান, অভিনব এই লটারি (Fancy lottery) অত্যন্ত জনপ্রিয়তার সঙ্গে চলে আসছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে।
এবার মনে করুন, এমনও হল যে টিকিটে থাকা একাধিক সিনেমার গান একই দিনে বেজে উঠল গীতাঞ্জলীতে। তখন? সে সমাধানও রয়েছে। যতজনের গান মিলে যাবে, পুরস্কারের সাড়ে সাতশো টাকা ততজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়, এমনটাই জানিয়েছেন লটারি বিক্রেতা শ্রীমন্ত দে, মধুসূদন কর’রা। তাঁরা জানান, সবটাই হয় স্বচ্ছতার সঙ্গে, প্রকাশ্যে। তাই কেউ কোনও আপত্তি জানান না। লটারির ক্রেতারা যেমন পুরস্কার পান তেমনই লটারি থেকে তাঁদেরও রোজগার হয় কিছুটা।
টিকিটের দাম যেহেতু মাত্র ১ টাকা, তাই আগুপিছু না ভেবে কিনে নেন বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা। আবার যেহেতু মাত্র হাজার টিকিটের খেলা, তাই জেতার সুযোগও বেশি। তাই থলে হাতে বাজারে এলে অনেকেই আগে একটা টিকিট কেটে নেন। তারপরে বাজার করেন। এরপর বাজার সেরে অপেক্ষা করেন ঠিক ৯ টা কখন বাজে! বলা তা যায় না, হয়তো শিকে ছিড়ে গেল ভাগ্যে!