সঙ্গগুণ

আমরা সবাই জানি প্রবাদটা। ‘সৎ সর্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমরা সেটা পালন করি না। সেজন্য প্রতিপদে ঠকতে হয়। তখন আর কিছু করার থাকে না। কোনও একটা কাজে সৎবুদ্ধির পরিবর্তে অসৎবুদ্ধি চরম সর্বনাশের দিকে আমাদের ঠেলে দেয়। তাই আমাদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকা দরকার। কোনও কিছু করার আগে বার বার ভাবা দরকার।

একটি ছোট প্রচলিত গল্প বলছি। এক বনে একটি বোকা বাঘ আর একটি দুষ্টু ও হিংসুটে শিয়াল থাকত। অন্য প্রাণীরা সবাই শিয়ালকে এড়িয়ে চলত। তাই শিয়ালের কোনও বন্ধু ছিল না। কিন্তু বোকা বাঘটি একদিন শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিল। শিয়াল তো মহাখুশী। অন্য প্রাণীরা বাঘকে বলল, দুষ্টু শিয়ালের সঙ্গ ত্যাগ করতে। কিন্তু বাঘ তো বোকা। সে কারওর কথা শুনল না। এদিকে বনে খাদ্যের আকাল দেখা দিল। বাঘ ও শিয়াল সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘোরে খাবারের খোঁজে। কিন্তু খাবার জোটে না।

কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শিয়াল একদিন রাতে রাজার বাড়িতে মুরগি চুরি করতে গেল। ধরা পড়ে গেল শিয়াল। তাকে একটি গাছে বেঁধে রাখল রাজার প্রহরী। বলে গেল, সকালে তোর বিচার হবে। প্রাণভয়ে শিয়াল কান্নাকাটি করতে লাগল। ভোর হয়ে গেল। কেউ তাকে সাহায্য করতে এল না। এমন সময় বাঘ সেদিকে এল। বন্ধুকে এভাবে বাঁধা থাকতে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেল সে। দুষ্টু শিয়াল কাঁদতে কাঁদতে বলল, রাজার মেয়েকে বিয়ে না করার অপরাধে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বোকা বাঘ তা সত্যি মনে করে শিয়ালকে বলল, তার বিয়ে করতে আপত্তি নেই। তাই শিয়াল তাকে সেখানে বেঁধে রেখে চলে যেতে পারে। বাঘ শিয়ালের বাঁধন খুলে দিল। শিয়াল বাঘকে সেখানে বেঁধে রেখে বলে গেল, সকালে কনের বাড়ির লোকজন এসে যদি কিছু বলে বা তার সঙ্গে কিছু করে সে যেন চটে না যায়। বোকা বাঘ তাতে সম্মতি দিতেই কেটে পড়ল শিয়াল।

সকালে রাজার প্রহরী লোকজন নিয়ে এল, শিয়ালটিকে মারবে বলে। এসে তো অবাক, শিয়ালের জায়গায় একটা বাঘ! প্রথমে ভয় পেলেও যেহেতু বাঘ বাঁধা আছে, তাই আর কেউ পালালো না। উল্টে বাঘের দিকে তাক করে ইট, পাথর ছুড়তে শুরু করল। বাঘ ভাবল, কিছু করলে যদি কনের বাড়ির লোকজন চটে যায়! সে উল্টে হাসাহাসি করতে থাকল। এমন সময় একজন একটা বল্লম দিয়ে খোঁচা মারল। বাঘ আর সহ্য করতে না পেরে গর্জে উঠল। তখন সবাই মিলে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। মৃত্যুর আগে বাঘের মনে পড়তে লাগল, বাকি প্রাণীদের কথা। সবাই বলেছিল দুষ্টু শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করতে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

এবার এক পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে নিয়ে একটি প্রচলিত কাহিনী বলছি। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বরাবরই আপনভোলা মানুষ ছিলেন। তাঁর গাড়ির ড্রাইভার ভদ্রলোকের সঙ্গে তাঁর ভারি ভাব। একদিন একটি সভা থেকে ফে‌রার পথে গাড়িতে দু’জনে গল্প করতে করতে চলেছেন। এমন সময় হঠাৎ ড্রাইভার বলে উঠলেন, স্যার, আপনি বিভিন্ন সভায় যে ভাষণ দেন তা আমার শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।’’ আইনস্টাইন তো অবাক! বললেন, ঠিক আছে। পরের সভায় আমার বদলে তোমায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি তাহলে গাড়িতে আরাম করে বসে থাকবো।

পরের সভায় সত্যি সত্যিই ড্রাইভারকে আইনস্টাইন সাজিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তিনিও আইনস্টাইনের ভাষণ সাবলীল ভাবে বলে গেলেন। খুব হাততালি পড়ল। তাকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার আগে হঠাৎ একজন বললেন, আচ্ছা, আপেক্ষিকতাবাদের সংজ্ঞাটা যদি আর একবার বুঝিয়ে দেন? ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন ড্রাইভার। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি বলে উঠলেন, এত সহজ বিষয়টা এখনও আপনার মাথায় ঢোকেনি? তাজ্জব! আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন। সেই বুঝিয়ে দেবে।’’

এই কাহিনী থেকে একটা বিষয় পরিস্কার। যেমন মানুষের সঙ্গে ঘুরবেন আপনিও তেমনই হবেন। সেজন্যই সব সময় সৎসঙ্গ খুঁজে নেওয়া জরুরি। তাতে আপনার জীবনদর্শনও ইতিবাচক হয়ে উঠবে। আপনি নিজে আর পাঁচজনের প্রেরণা হয়ে উঠবেন। বদলে যাবে আপনার আশপাশের পরিবেশও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *