আসলে গ্রেটা থুনবার্গ আমাদেরই মেয়ে

গ্রেটা থুনবার্গকে চেনেন? সে, আপনি নাই চিনতে পারেন। আপনি সাধারণ মানুষ। আপনি সেলিব্রেটি নন। সেভাবে পরিবারের বাইরের কারওর আদর্শ নন। কিন্তু মনে করুন কোনও সেলিব্রেটি যদি গ্রেটাকে না চেনেন, সেটা কিন্তু দুশ্চিন্তার।

কেন জানেন? সুইডিস কিশোরী গ্রেটা সারা বিশ্বে পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে সাড়া জাগিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাস্ট্রনায়কদের কাছে গ্রেটার ডাক পৌঁছেছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের সব দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মিছিল করেছে। তা সত্বেও গ্রেটাকে চেনেন না ব্রিটিশ অভিনেত্রী আমান্ডা হেন্ডারসন। যা থেকে আসলে অভিনেত্রীর পরিবেশ নিয়ে জ্ঞানের দৈন্যতাই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন বহু পরিবেশপ্রেমী।

pix of greta thunberg
Greta Thunberg

পরিবেশ নিয়ে রাস্ট্রপুঞ্জ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বক্তব্য রেখেছেন গ্রেটা। তাঁর সেই সব বর্ক্তৃতার সংকলন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বই, ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক আ ডিফারেন্স’। সম্প্রতি একটি টিভি শো-এ ব্রিটিশ অভিনেত্রী আমান্ডা হেন্ডারসনকে প্রশ্ন করা হয়, কোন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকারী এই বইটি লিখেছেন? আমান্ডা কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠেন, ‘‘শ্যারন?’’ প্রশ্নকর্তা কার্যত অবাক হয়ে যান। শো-এর সেই অংশের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হতে দেরি হয়নি। তা এসে পৌঁছায় গ্রেটার হাতেও। গ্রেটাও কম যান না! সঙ্গে সঙ্গে মজা করে টুইটারে নিজের নাম বদলে গ্রেটার বদলে ‘শ্যারন’ করে দিয়েছেন। পরিবেশপ্রেমীরা অনেকেই এখন তা নিয়ে মজা করছেন।

গ্রেটা মজা করতেই পারেন। তিনি সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। গ্রেটা ছোট থেকে ‘অ্যাসপারগার সিন্ড্রোম’ নামক জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। ফলে কথাবার্তা কিছুটা অস্বাভাবিক। ২০১৮ সালের আগস্টে সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে পোস্টার হাতে দাঁড়ানো কিশোরী গ্রেটার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী পরিবেশ বাঁচাতে সুইডেন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে না পারায় রাষ্ট্রনেতাদেরই দায়ী করেছিলেন তিনি। জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থার দাবিতে সুইডেনের সংসদে টানা তিন সপ্তাহ ধরণা দেন তিনি। এছাড়া প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। তা ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ হিসাবে পরিচিত হয়েছে। হয়ে উঠেছে পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক।

Greta Thunberg in school strike for climate

গত বছর তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তৃতা দেওয়ার ডাক পান। তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রকৃতি ধ্বংসের কারণ হিসেবে সরাসরি বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের দায়ী করেন। সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সরাসরি মাঠে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। একদিন একা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে বসে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তিনি, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশেও গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী পথে নেমে মিছিল করছেন।

সুইডেনের থেকে আমাদের দেশে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। দূষণের জেরে স্কুল-কলেজে, অফিসে ছুটি দিয়ে দিতে হয়, ক্রিকেট ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। আমরা টিভিতে এসব দেখি। কিন্তু গ্রেটার মতো কোনও ১৬ বছরের কিশোরী প্লাকার্ড হাতে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দিল্লির পার্লামেন্টের সামনে ধরণা দিচ্ছেন, এমন কিন্তু আমরা ভাবতেও পারি না। আর আমরা তো তৃতীয় বিশ্বের দেশ। প্রথম বিশ্বের দেশগুলিই কি গ্রেটার আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিতে পেরেছে? প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে গ্রেটার প্রতিবাদ, ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ দিতে দেয়নি ইউরোপের নানা স্কুল। এমনকি তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের নামে স্ট্রাইককে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। তাও গ্রেটা অবিচল।

ক্ষমতাসীনদের হম্বিতম্বিকে পাত্তা না দিয়ে যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ সরব হয়েছেন তাতে গ্রেটা ‘মজা’ পাচ্ছেন বৈকি। তাই তো ব্রিটিশ অভিনেত্রী আমান্ডা হেন্ডারসন তাঁর নাম বলতে না পারলেও বিরক্ত হন না গ্রেটা। উল্টে টুইটারে নিজের নামই বদলে করে দেন ‘শ্যারন’!

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours