করোনার সংক্রমণ বাংলাদেশে যত বাড়ছে গুগল সার্চে তত হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। স্বাভাবিক। করোনা আসার আগে অনেকেরই এই জিনিসটি নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। বাড়িতে হয়তো হ্যান্ডওয়াশ ছিল। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার? খুব কম মানুষই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেন। কিন্তু করোনা এসে সব বদলে দিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার খুব জরুরী।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার আসলে কি? করোনার সংক্রমণ রুখতে তার ভূমিকা কি? হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গুরুত্ব ঠিক কতটা সে বিষয়ে সচেতন করতেই এই প্রতিবেদন।
আমার আবেদন, মাস্ক পরার সঙ্গে সঙ্গে সবাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত করে ফেলুন। তবে কোনও কারণে যাঁর পক্ষে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা সম্ভব নয়, তিনি সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার যে কি সত্যি বলতে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। ভারতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় জানুয়ারি মাসে। সেখানে দেখা যায়, ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে একজন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছেন। একজন গ্রামের মানুষ এলেন। তাঁর হাতে দিতেই তিনি তা ঠাকুরের চরণামৃত মনে করে খেয়ে নিলেন। পরে অবশ্য তিনি ভুল বুঝতে পারেন। এই হচ্ছে অবস্থা। স্বাভাবিকভাবেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে গুগল সার্চে খোঁজ যে বাড়ছে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
বাইরে থেকে বাড়ি ঢোকার পরে অবশ্যই এবং বাড়িতে থাকলেও মাঝে মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জীবানুমুক্ত হওয়ার জন্য সাবান-জলের চেয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহারের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। কিন্তু কেন?
হ্যান্ড স্যানিটাইজার মূলত তিন ধরণের রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা হয়। জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে সেই রাসায়নিকগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিন ধরনের রাসায়নিক হল, ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানল, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা আইসোপ্রোপানল এবং বেঞ্জালকোনিয়াম ক্লোরাইড। তিনটি রাসায়নিকই জলে খুব দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে যায়।
তবে সাধারণত স্যানিটাইজার বানাতে ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের ব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে। যা নানা ধরনের মদের অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই ইথাইল অ্যালকোহল তো বটেই, যে কোনও ধরনের অ্যালকোহলই আমাদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে বা তাদের নিষ্ক্রিয় করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। অ্যালকোহল ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রোটিনগুলিকে ভেঙে দেয়।
আন্তর্জাতিক সায়েন্স জার্নাল ‘ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি রিভিউজ’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, কোনও মিশ্রণে অন্তত ৩০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকলে তা জীবাণুনাশক হয়ে ওঠে। অ্যালকোহলের ঘনত্ব যত বাড়ে, তত জীবাণুনাশের ক্ষমতা বাড়ে সেই মিশ্রনের। সবথেকে ভালো হয় যদি সেই মিশ্রণে অ্যালকোহলের ঘনত্ব ৬০ শতাংশ পেরিয়ে যায় তা হলে সেটি বহু ধরণের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে বা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। অ্যালকোহলের ঘনত্ব যত বেশি হয় তত তাড়াতাড়ি জীবাণুনাশ করতে পারে। তবে অ্যালকোহলের ঘনত্ব ৯০-৯৫ শতাংশের বেশি হয়ে গেলে আবার সেই মিশ্রনের জীবানুনাশক ক্ষমতা কমতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বহু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একবার কিছু দিয়ে সেগুলিকে অকার্যকর করে দিলে পরবর্তীতে তারা নিজেদের পরিবর্তন করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ফেলে। ফলে পরে আর তা দিয়ে কাজ হয় না। কিন্তু অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে এমনটা হয়না। অ্যালকোহল দিয়ে কোনও ব্যাকটেরিয়া মারতে পারলে, দীর্ঘ দিন ব্যবহারের পরেও সেই অ্যালকোহলের বিরুদ্ধে সেই ব্যাকটেরিয়ারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না। তবে ডায়ারিয়ার ব্যাকটেরিয়াকে অ্যালকোহল মারতে পারে না।
আশা করি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলেন এই প্রতিবেদনে। আরও কোনও প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন।
আসুন সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামি। জয় আমাদের হবেই।
+ There are no comments
Add yours