How to grow bougainvillea. বুগেনভেলিয়া যা বাগানবিলাস নামেও পরিচিত। ফরাসী বিজ্ঞানী লুই অটোইন ডি বোগেইনভিলিয়া’র নাম অনুসারে এ গাছের নামকরণ করা হয়েছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুগেনভেলিয়ার নাম বাগানবিলাস দেন। সামান্য যত্নে বেড়ে ওঠে এই গাছ। অনেকগুলো রঙে পাওয়া যায়। রানী, সাদা, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার একপাতি ও ডবলপাতি, দুরকমই হয়। তবে আমার একপাতি ফুলই বেশী সুন্দর লাগে।
How to grow bougainvillea indoors
how to grow bougainvillea. এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম: Bougainvillea spectabilis। বোটানিক্যাল নাম Bougainvillea Glabra। এটি গুল্মজাতীয় গাছ। উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলিতে এই গাছ জন্মায়। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। গৃহসজ্জ্বা কিংবা বাড়ীর চারপাশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে লতাজাতীয় গুল্ম হিসেবে বাগানবিলাস লাগানো হয়।
কোন কোন দেশে বুগেনভেলিয়ার দেখা মেলে
ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর, ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, হাওয়াই দেশে বুগেনভেলিয়া খুব প্রচলিত গাছ।
কোথায় লাগাবেন বুগেনভেলিয়া
বাগানবিলাসের বাগান হতে পারে বাড়ির টবে। আপনার ব্যালকনিকে সাজিয়ে তুলতে এর জুরি মেলা ভার। গাছটি বাড়ির রূপ বদলে দেয় এক লহমায়। বাড়ির পাঁচিলেই হোক বা বারান্দার রেলিংয়ে- বাগানবিলাস নিজের সৌন্দর্যে রূপ বদলে দেয় পরিবেশের। লাল, হলুদ, আলতা-সিঁদুরে গোলাপি কিংবা সাদা, বিভিন্ন রঙের বুগেনভেলিয়া গাছ সামান্য যত্নেই রাস্তার ধারে কিংবা কোনও বাড়ির বাগানে বেড়ে ওঠে।
কী কী দরকার বুগেনভেলিয়া বেড়ে উঠতে
টবে এই গাছ ভালো হয় না, এমনটা অনেকই মনে করে থাকেন। আদতে তেমন নয় বিষয়টা। নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার জল আর যত্নে টবেই বেড়ে ওঠে এই গাছ। শুধু বেড়ে ওঠা নয়, ডাল ছড়িয়ে সুন্দর ফুলও হয়। বাগানবিলাস ফুলের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো, মাটি, জল ও সার। সূর্যের জোরালো আলোয় এই গাছ ভালো থাকে। তাপও সহ্য করতে পারে এই গাছটি। তাই বাগানে, ছাদে, বারান্দায়, যেখানে বেশি রোদ ঢোকে, তেমন জায়গায় এই গাছ রাখুন। ঠিকমতো আলো আর তাপ পেলে ফুলের রং আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বোগেনভিলিয়া ঢালু জমিতে রোপণ করা উচিত,যেখানে জল জমে না । বোগেনভিলিয়া লতানো প্রকৃতির। তাই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া হলে ভালভাবে বেড়ে ওঠে।
Buy BEST Plant Cutting Scissors hereবুগেনভেলিয়ার ডাল ছাঁটার সেরা কাঁচি
how to grow bougainvillea. কীভাবে বুগেনভেলিয়ার যত্ন করবেন
টব নির্বাচন
যে কোনও গাছের ক্ষেত্রে টবে ড্রেন তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। টবে যে ছিদ্র আছে তার ওপর টবের ছোট্ট ভাঙা অংশ দাও বন্ধুরা। তার উপরে চিপ স্টোন দিতে হবে অল্প করে। তার উপরে বালি দাও। এরপর কিছুটা মাটি দিয়ে চারা গাছ বসাও। তারপর বাকি মাটি দিয়ে দাও। এরপর ঝাঁঝরি করে জল দাও। প্রথম দু’তিন দিন ছায়ায় রাখতে হবে। গাছ সতেজ হলে পছন্দের জায়গায় রেখে দাও। রৌদ্রের গাছ হলেও সেমি সেডেও এই গাছ ভালো হয়।
প্রথমে ৮ ইঞ্চির টবে গাছ বসানো যেতে পারে। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পরে ১০ ইঞ্চি বা ১২ ইঞ্চি টবে প্রতিস্থাপন করা দরকার। সংগ্রহ করতে হবে। প্লাস্টিকের টব না নেওয়াই ভাল। কারণ, তাতে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভাল হয় না। মাটির টবে গাছ প্রতিস্থাপনের আগে জল যাতে জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য টবের নীচে ফুটো করে জলনিকাশির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।
মাটি প্রস্তুতি
মাটি তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে, জল যেন মাটিতে না জমে। সেই জন্য মাটিতে বালির ভাগ বেশী হলেই ভালো। মাটি এক ভাগ, বালি এক ভাগ, জৈব সার এক ভাগ এবং এক ভাগ গোবর সার। এছাড়া আধ মুঠো হাড়গুঁড়ো, আধ মুঠো শিং কুচি, দু’চামচ নিম খোল। এই মিশ্রণ ভালো করে তৈরি করে নিতে হবে। মিশ্রনে অল্প জল দিয়ে ১৫ দিনের জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর পলিথিন থেকে বার করে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। গাছটিকে সরাসরি মাটিতে প্রতিস্থাপন করতে চাইলে, প্রতিস্থাপন এর আগে মাটি ভাল ভাবে খুঁড়ে নিতে হবে এবং উপরে উল্লিখিত উপাদানগুলি পরিমাণ মত দিতে হবে। এরপর দিন পনেরো অপেক্ষা করতে হবে। তারপর গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।
জল প্রয়োগ
জল দেওয়ার সময় নিয়ম মেনে জল দিতে হবে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিয়মিত জল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যখন ফুল হয় অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জল দিতে হবে পরিমিত ভাবে। তা না হলে ফুলের আকার সঠিক হবে না। এই সময়েই আসল দেখাশোনা করতে হয় এই গাছের। গাছে প্রচুর পাতা এসে গেলে মাটি শুকনো করে গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। তা না হলে ফুল আসবে না। ৭ থেকে ১০ দিন এমন করলেই গাছের সব পাতা ঝড়ে যাবে এবং গাছে কুঁড়ি আসবে। গাছে কুঁড়ি আসা শুরু হলেই নিয়মিত গাছে জল দিতে হবে।
আলোর প্রয়োজনীয়তা
বুগেনভেলিয়া গাছ রোদ পছন্দ করে। তাই বাড়ির ছাদে এই গাছ খুব ভালো হয়। অন্তত, যেখানে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সরাসরি সূর্যের আলো আসে, তেমন স্থানে টব রাখতে হবে। ব্যালকনিতে রাখতে গেলে দেখতে হবে ব্যালকনির কোন জায়গায় রোদ আসে। সেখানেই টব রাখতে হবে। সঠিক রোদ পেলেই গাছ বেড়ে উঠবে তড় তড় করে। মরসুমে ফুলে ভরে উঠবে গাছ। তবে টবে গাছ বাড়ার পরে নতুন ডাল ছয়-সাত ইঞ্চি হলেই পিনচিং করে দিতে হবে। এতে গাছ ঝাঁকড়া হবে এবং ফুলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
সার প্রয়োগ
মাসে একবার করে সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার জলে ভিজিয়ে রেখে লিকুইড আকারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়াও দু’মুঠো গোবর সার, এক চামচ নিম খোল, এক মুঠো হাড় গুঁড়ো, একমুঠো শিং কুচি দিতে হবে একমাস অন্তর। তবেই গাছ সতেজ হবে। গাছের স্বাস্থ্য ভালো হবে। এছাড়া প্রতি ৪৫দিন অন্তর একবার অনুখাদ্য দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হয়ে গেলে মাসে একবার করে কুঁড়ে ঝুরঝুরে করে দিতে যাতে মাটিতে বাতাসের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া শিকড় ৭৫ শতাংশ রেখে বাকি ২৫ শতাংশ ছেঁটে দিতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভাল হবে।
রোগ
রোগ-পোকার হাত থেকে গাছ বাঁচাতে প্রতি ১৫ দিনে এক বার যে কোনও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বর্ষাকালে অবশ্যই ১৫ দিনে একবার যে কোনও ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করতে হবে।
how to grow bougainvillea. স্পষ্ট ধারণা একটা পেয়ে গেলেন। এছাড়াও বাড়ির ব্যালকনিতে আরও কিছু এমন ধরণের গাছ রয়েছে যেগুলি লাগাতে পারেন। মাধবীলতা, মর্নিং গ্লোরি, জুঁই ফুল, ফ্লেম ভাইন প্রভৃতি। তবে জুঁই সাধারণত বর্ষাকালে বেশি ফোটে। মাটিতে একটু জল আর সার দিলেই গাছ বেড়ে উঠবে। মন ভালো রাখতে এই ধরণের ইন্ডোর প্ল্যান্ট বাড়িতে লাগাতে পারেন সহজেই। পরিচর্যাও খুব সহজ। দিনে সামান্য সময় দিলেই এই সব গাছ ভরে উঠবে ফুলে। বাইরে থেকে ক্লান্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে সব স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে এই সব ফুল চোখের সামনে দেখতে পেলে। দূর হয়ে যাবে স্ট্রেস। তাই আর দেরি করবেন না। নেমে পড়ুন। দেখবেন, আপনার আশপাশ কেমন দ্রুত বদলে যাচ্ছে!
+ There are no comments
Add yours