টাক নিয়ে টেনশন? সবাই ‘টেকো’ বলছে?

চুল উঠে যাচ্ছে? টাক পড়ছে? সবাই টেকো বলছে? কি করবেন? প্রথমেই টাক নিয়ে টেনশন উড়িয়ে দিন। তাহলেই দেখবেন নিজেকে হালকা লাগছে। এবার কি করা যায় তা নিয়ে কথা বলুন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। সঙ্গের প্রতিবেদনে প্রাথমিক কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘টেকো’। গল্পটা হয়তো অনেকেই জেনে গিয়েছেন। একদিন একটি চুলের তেলের বিজ্ঞাপন দেখে সেটি ব্যবহার করতে শুরু করেন অলোকেশ। এরপরেই তাঁর মাথার চুল ঝরতে শুরু করে। মনে মনে বেশ ভেঙে পড়েন অলোকেশ। মাথার এই হাল দেখে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন মীনা। সকলেই অলোকেশকে নিয়ে হাসাহাসি করতে থাকেন। কীভাবে শেষ পর্যন্ত তিনি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন, তা নিয়েই এই ছবি।

বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, কোনও তেল মেখে চুল উঠে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয়। প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মেই কিছু পুরনো চুল জীবনচক্র শেষ করে ঝড়ে পড়ে আর কিছু নতুন চুল গজায়। তবু আমরা সবাই কমবেশি উদ্বিগ্ন থাকি, মাথা বোধ হয় একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল! তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাথার ত্বকের লোমকূপের কোনও সমস্যা, চুলের কোনও রোগ বা শরীরের আভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যা না থাকলে মাথা একেবারে ফাঁকা হয় না। কাজেই টেকো হওয়াও অত সোজা নয়!

প্রথমেই বলা দরকার, চুল উঠে যাচ্ছে বলে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রশ্নের মুখে, এটা ঠিক নয়। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের মতো মানুষেরও মাথায় টাক ছিল। তবে কি না, সব জানার পরেও মাথায় চুল পাতলা হতে শুরু করলেই কেমন যেন ইনসিকিয়র কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকেন কেউ কেউ। মাথা ভরা ঘন কালো চুলকে চিরদিনই সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসাবে দেখা হয়েছে। তাই চুল উঠলেই গেল গেল রব পড়ে যায়।

জন্মের সময় একজনের মাথার প্রায় এক লক্ষ চুলের গোড়া বা হেয়ার ফলিকল থাকে। একটি চুলের জীবনচক্রের তিনটি দশা। প্রথম তিন বছর হল নতুন চুল বেড়ে ওঠার সময়। এরপর ২-৪ সপ্তাহের একটা পর্যায় এবং ৩-৪ মাসের আর একটা পর্যায়। এবার চুল পড়ার সময। সেই জায়গা পূরণ করে নতুন চক্রের চুল। তাই চুল পড়ে গেলেও মাথা ফাঁকা কিছুতেই হয় না। কারণ, মাথায় বিভিন্ন চুল বিভিন্ন দশায় থাকে। তবে চুলের ঘনত্ব সবার এক রকম হয় না।

চুলে কোনও গন্ডগোল হচ্ছে কি না তা বাড়িতে বসেই আপনি বুঝতে পারবেন। ৩-৮ বার মাথার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫০-১০০ টি চুল গোছা হিসাবে ধরে টানার পরে যদি ৩-৫ টির বেশি চুল না ওঠে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন ঠিক করে কোন চুল উঠবে আর কোন চুল থাকবে। এটা কিছুটা বংশগত। কপালের দুপাশে, মাথার পিছনের দিকের চুলের গোড়ায় অ্যান্ড্রোজেন রিসেপটর থাকে। বয়ঃসন্ধির পরে যখন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কোনও কোনও পুরুষের ওই সব অঞ্চলের চুলের গোড়া ক্রমশ ছোট ও সংকুচিত হতে হতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সেই লোমকূপগুলির আর চুল তৈরির ক্ষমতা থাকে না। মিনোক্সিডিল মাথায় টাক হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগালে চুল গজাতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মুখে লোমের আধিক্য দেখা যায়, ত্বকে চুলকানি হয়। তাই, যা করার তা করতে হবে ডাক্তারের নির্দেশ ও পরামর্শ মতো।  

পকেটের জোর থাকলে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেতে পারে। মাথার একদম পিছনের দিকের ত্বকের চুল অ্যান্ড্রোজেন দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই সেখানকার চুলের গোড়াশুদ্ধ ত্বক তুলে এনে সামনের দিকের টাক পড়া জায়গায় ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেতে পারে। নতুন জায়গায় ওই চুল বাড়তে থাকে। ঝড়েও পড়ে না। তবে ট্রান্সপ্ল্যান্টের খরচ এখনও সাধারণের নাগালের বাইরে। তবু সৌন্দর্যের কথা ভেবে সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেকে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করছেন।

তবে মনে রাখতে হবে, বহু কারণেই চুল ঝড়তে পারে। কিছু কিছু স্থানীয় অসুখ যা একান্তই চুলের সমস্যা থাকতে পারে। আবার কারও কারওর টাক পড়া দেখে অন্য রোগের লক্ষণ বোঝা যায়। থাইরয়েড রোগে চুল উঠতে উঠতে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। টাইফয়েড, জন্ডিস, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে পুষ্টির সমস্যা দেখা দেয়। তখন সঠিক পুষ্টির অভাবে চুল পড়ে যায়। পেটের রোগেও অনেক সময় টাক পড়ে। তাই বেশি করে চুল উঠলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। তাহলে চুল ওঠার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তিনি উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। ভবিষ্যতে ‘টেকো’ হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন আপনিও।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours