করোনা ও লকডাউনের প্রভাবে প্রাণী ও মৎস্য চাষে বিপুল ঘাটতি, প্রশ্নের মুখে গ্রামীণ অর্থনীতি
দুধ ও মাছ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান ভারতের। কিন্তু করোনা এবং লকডাউনের জেরে সারা দেশে প্রাণী পালন ও মাছ চাষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে সার্বিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতি। প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে খাদ্য সুরক্ষা নিয়েও।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে উত্তরণের পথ খুঁজতে গত ২৯ আগস্ট ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটরেনারি অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে ছয় দশক ধরে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অ্যানিম্যাল হেলথ’ এর পক্ষ থেকে বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার (Webniar) মাধ্যমে ‘দেশে প্রাণী ও মাছ চাষের উপর কোভিড-১৯ অতিমারি ও লকডাউনের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়।

সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় কৃষি গবেষণা পর্ষদের (প্রাণী বিজ্ঞান) প্রাক্তন উপ অধিকর্তা অধ্যাপক কেএম বজেরবড়ুয়া। স্বাগত ভাষণ দেন জার্নালের মুখ্য সম্পাদক অধ্যাপক বরুণ রায়। আলোচনার সূত্রপাত করেন জার্নালের সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাস। প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন জার্নালের প্রকাশক তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটরেনারি অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক ডঃ পার্থ সরকার। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়, তার সম্ভাব্য উপায়গুলি তুলে ধরেন হায়দরাবাদের ভারত সরকারের পোলট্রি গবেষণা অধিকরণের অধিকর্তা ডঃ রুদ্র চ্যাটার্জী, ভুবনেশ্বরের কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষ প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা ডঃ এসকে সোয়েন, হরিয়ানার জাতীয় গো-গবেষণা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণী প্রজননের বিভাগীয় প্রধান ডঃ সিতাংশু মোহন দেব, অর্থনীতিবিদ ডঃ দেবাশিস সরকার প্রমুখ।

বক্তারা জানান, দেশে প্রাণীজ পণ্যের মূল বাজার নির্ভরশীল মূলত মানুষের প্রতিদিনের চাহিদা এবং হোটেল-রেস্তোঁরার উপর। লকডাউনের প্রভাবে গত পাঁচ মাসে প্রাণী ও মৎস্য উৎপাদকরা পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত না করতে পারার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। উপযুক্ত পরিচর্যার ঘাটতিতে উৎপাদনও কম হয়েছে। আবার সঠিক প্রজনন ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় খামার বাড়িতে অনুন্নত জাতের প্রাণী ও মৎস্য সম্ভার সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে আগামী কয়েক বছর দেশে প্রাণী ও মৎস্য উৎপাদন কম হতে পারে। ফলে দুধ, ডিম, মাছ, মাংসকে কেন্দ্র করে যাবতীয় জীবিকা প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে। তাছাড়া প্রাণীজ প্রোটিনের ঘাটতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে পারে।
বক্তাদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে, গ্রামীণ অর্থনীতি ও মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের অনেকে প্রাণী ও মৎস্য ক্ষেত্রকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করে এগোতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে খামারি সহায়ক দল ও সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাণীজ পণ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিপননের নিবিড় পরিকাঠামো গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এছাড়া স্বল্প সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করাও জরুরি। পাশাপাশি প্রাণীজ খাদ্য ও মৎস্য থেকে যে করোনা সহ অন্যান্য জীবানুর সংক্রমণ ঘটে না, মানুষের মধ্যে এই বিভ্রান্তি দূর করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা। আলোচনায় দেশ-বিদেশের প্রায় সাতশো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।