মাটন রাঁধুন জমিয়ে
রান্না মানে একটা আর্ট। যে কোন শিল্পী পারে তার শিল্পে প্রমাণ দিতে।
” আমার রান্নাঘর” তৈরীর একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে । আমার বিয়ে হয় পড়াশুনা শেষ হওয়ার একটু আগে। আমি তখন একটা চাকরি করি । রান্নার কিচ্ছুটি জানি না। মিঞা বিবির সংসার । প্রতিদিন কি বাইরে থেকে খাওয়া যায় ! অগত্যা রান্নার ব্যবস্থা হল । ভাত হল কিন্তু শক্ত। বেগুন ভাজা হল তাতে নুন নেই । আমার সামনের মানুষটি কিছু মাত্র প্রতিবাদ না করে সবটা খেলেন । কিন্তু আমি কিছুই মুখে তুলতে পারিনি।
এরপর আমার দিদা, জেঠিমা , মা , জ্যেঠতুতো দিদি যারা সবচেয়ে ভালো রান্না করে তাদের কাছে ক্লাস শুরু করলাম । বানিয়ে ফেললাম “আমার রান্নাঘর”। এটা আমার রান্নার খাতা । অত্যন্ত মূল্যবান । আর সেখান থেকেই আমি কয়েকটি রান্নার হদিস দেব তোমাকে ।
চলো আজ মটনের একটি জিভে জল আনা রান্না করি।

ধরো বাড়িতে হঠাৎ অতিথি আসবে আর বানাতে হবে “মটন “। মটন মানেই মনে হয় হাজার ছক্কি ; “আমার রান্নাঘর” তোমাকে সাহায্য করবে চটজলদি মটনের সুস্বাদু রান্না করতে।
৭০০ গ্রাম মাংস রান্না করতে যা লাগবে—
১) ৭০০ গ্রাম মাংস
২) আলু মাঝারি সাইজের ৪ টি
৩) তেজপাতা ২ টি
৪) পেঁয়াজ মাঝারি সাইজের ২ টি
৫) রসুন ৭-৮ টি কোয়া
৬) শুকনো লঙ্কা ৫ টি
৭) জিরে ১ টেবিল চামচ
৮) আদা ১ ইঞ্চি
৯) গরম মসলা ( ৩ ইঞ্চি দারচিনি, তিনটে এলাচ, ২ টো লবঙ্গ )
১০) সরষের তেল ৫ টেবিল চামচ
১১) নুন – হলুদ পরিমান মত।
প্রণালী
ভালো রান্না করতে হলে পরিমাণের দিকে সবসময় নজর রাখতে হবে । তরকারি কাটার দিকেও যত্ন রাখতে হবে। যেমন, আলু যখন কাটবে প্রতিটা আলুর সাইজ যেন সমান হয়। পেঁয়াজ পাতলা করে কেটে নাও। রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে রাখো। আদা, রসুন , গরম মশলা , অর্ধেক কাটা পেঁয়াজ একসঙ্গে ভালো করে বেটে নাও। এখানে আমরা আলু কাটব দু টুকরো করে । যদি কেউ চাও তো ৪ টুকরো করতে পারো। আলু কাটা হলে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
এবার কড়াই গরম হলে তাতে নুন হলুদ মাখানো আলু ছেড়ে দাও। আলু লাল হয়ে এলে তুলে রাখো। গরম তেলে অর্ধেক পেঁয়াজ ছেড়ে দাও। আঁচ কমিয়ে ব্রাউন করে ভেজে নাও। গ্যাস বন্ধ করে দাও । পেঁয়াজ তুলে রাখো আলাদা পাত্রে। ভাজা পেঁয়াজ আর শুকনো লঙ্কা একসঙ্গে বেটে নাও। এবার মাংস ধুয়ে তেলে ছেড়ে দাও, সমস্ত বাটা মশলা দিয়ে দাও। নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে নেড়ে কষতে দাও। ফুটে উঠলে ঢাকা দিয়ে দাও , আঁচ কমিয়ে দাও। মাঝখানে একবার নাড়িয়ে দেবে । এবার তেল ছাড়তে আরম্ভ করলে , আরেকবার নাড়িয়ে নামিয়ে নাও কড়াই । আঁচে প্রেসার কুকার চাপাও । কসানো মাংস আর ভাজা আলু দিয়ে এককাপ গরম জল দাও । প্রেসার কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে দাও। তিনটে সিটি পড়লে আঁচ বন্ধ করে দাও ।
মটনের মাংস সুসিদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরী । ভালো সিদ্ধ হলে রান্নার স্বাদ বেড়ে যায় দ্বিগুন। কুকার ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। ঠাণ্ডা হলে গরম গরম মাংস পোলাও রুটি বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করো তোমার তৈরী মটনের কষা । আর মন জয় করে নাও তোমার প্রিয়জনের।