হাজারে হাজারে কমন মুরের মৃত্যুর খবর আসছে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে। দুশ্চিন্তায় পরিবেশবিদরা। দায়ী সেই, বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। জলবায়ু পরিবর্তন। হাজার হাজার পাখি নিজেরা মরে গিয়ে আমাদের সতর্ক করে দিয়ে যাচ্ছে। এখনও যদি আমরা না বদলাই, ওই পাখিদের মতো দিন অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের জন্যও।
কমন মুর। বছরের বেশিরভাগ দিন এদের কাটে সমুদ্রে। একমাত্র প্রজননের সময় সমুদ্র লাগোয়া পাথুরে জায়গা বা কোনও দ্বীপে উঠে আসে। এরা বাসা বাঁধতে পারে না। পাথরের কোলে ডিম পাড়ে এরা। তিরিশ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। বড় হয়ে সমুদ্রের ৩০-৬০ মিটার পর্যন্ত গভীরে ডুব দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে আসতে পারে। এমনকি ১৮০ মিটার নীচে গিয়েও মাছ ধরে আনার রেকর্ড রয়েছে অর্থাৎ সমুদ্রের প্রায় ছয়শো ফুট গভীর থেকে মাছ ধরে আনার ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
সেই কমন মুরের যেন মরক লেগেছে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের সমুদ্রতটে হাজার হাজার কমন মুরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এক বছরে অন্তত ১০ লক্ষ কমন মুর মারা গিয়েছে। সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে শুধু কমন মুরের দেহ। তাঁদের অনুমান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। সেজন্যই এই বিপর্যয়। উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের জলের ২০১৩ সাল থেকে বেড়েই চলেছে। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে এল নিনো এর জন্য তাপমাত্রা আরও বাড়ে। পরবর্তী একবছরে কমন মুরের মরক নজরে আসে।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রে শেওলা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্যের সংকটে পড়ে বহু জলজ প্রাণী। মাছেরাও বিপাকে পড়ে। মাছের সংখ্যা কমতে থাকে। এদিকে কমন মুররা বেঁচে থাকে মূলত সমুদ্রের মাছ খেয়ে। মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় তারা ভয়াবহ খাদ্য সংকটে পড়ে যায়। শুরু হয় মড়ক। এই দীর্ঘ সময়ে একদিকে হাজার হাজার কমন মুর মারা গিয়েছে। অন্যদিকে, এই সময়ে বংশবিস্তার হয়নি তাদের।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে বিশ্বের প্রতিটি প্রজাতিই কম-বেশি প্রভাবিত হয়েছে। এর ফলে বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়েছে। নানা ধরণের বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীর বার বার আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। হাতে সময় বেশি নেই। তবু আমরা জেগে ঘুমোচ্ছি। অথচ এখনই গা-হাত ঝেড়ে উঠেপড়ে না লাগলে বিপদ কিন্তু শিয়রে। পাশের জন কি করছে না ভেবে চলুন নিজেই নেমে পড়ি। হয়তো কে বলতে পারে, আপনাকে দেখে হয়তো একদিন তিনিও নেমে পড়বেন না পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গিয়েছেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’
+ There are no comments
Add yours