মা-বাবাকে ভালোবাসো, দুর্গাপুরে বলে গিয়েছেন ডি কৃষ্ণকুমার
বছর ঘুরে গিয়েছে। দুর্গাপুরবাসীর অনেকেই নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছেন কর্নাটকের মাইসোরের ডি কৃষ্ণ কুমারকে! দুর্গাপুর ছাড়ার আগে তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন সেই বার্তা, বাবা-মাকে ভালোবাসো। তাঁরা বেঁচে থাকাকালীন তাঁদের ভালোবাসো। তাঁদের সঙ্গে থাকো। দুঃখের বিষয়, আজকের দিনে বহু পরিবারেই মা-বাবাকে ব্রাত্য করে রাখেন ছেলে-মেয়েরা।

কৃষ্ণকুমার গত বছর ২০১৯ সালের মে মাসের শেষে একদিন দুর্গাপুরে এসেছিলেন। সত্তর বছরের বৃদ্ধা মা চুড়ারত্নাকে স্কুটারের পিছনে বসিয়ে দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরিয়ে দেখাতে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেই পথ ধরেই তাঁর দুর্গাপুরে আসা। ‘মাতৃসেবা সংকল্প যাত্রা’য় বেরিয়ে দেশের ছোট, বড় শহর, গ্রামে মাকে ঘোরানো ছিল কৃষ্ণ কুমারের উদ্দেশ্য।
হঠাত কেন এই সংকল্প? বছর চল্লিশের কৃষ্ণ কুমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কর্মসূত্রে থাকতেন ব্যাঙ্গালুরুতে। বাবা মারা যাওয়ার পরে মাকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখেন। মায়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, মাইসোরের বাড়ির একেবারে কাছের বেলুড়, হালেবিডু মন্দিরও মা কখনও যেতে পারেননি। দূরের কোনও তীর্থস্থান তো দূরের কথা! মায়ের সারা জীবন কেটেছে যৌথ পরিবারে রান্নাঘর সামলে, কাপড় কেচে, সংসারের সব কাজকর্ম নিয়ে। সেদিনই কৃষ্ণকুমার প্রতিজ্ঞা করেন, বেলুড়, হালেবিডু তো বটেই, সারা দেশের সব তীর্থস্থান ঘুরিয়ে দেখাবেন।
দেখুন কৃষ্ণকুমারের ভিডিও বার্তা- https://www.youtube.com/watch?v=G6BvoKerolU&feature=youtu.be
তাঁর বাবা তাঁকে প্রায় ২০ বছর আগে একটি স্কুটার দিয়েছিলেন। সেই স্কুটারের পিছনের আসনে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মাকে বসিয়ে বেরিয়ে পড়েন কৃষ্ণকুমার। মাকে যাতে একটুও হাঁটতে না হয়, স্কুটারে করে অলিগলি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় বলেই স্কুটার বেছে নেন তিনি। সারাদিন চলার পরে রাত কেটেছে তীর্থস্থানের কোনও অতিথি নিবাসে।
দুর্গাপুরের স্বামী বিবেকানন্দ বানীপ্রচার সমিতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘‘মা-বাবা বেঁচে থাকাকালীন সময়ে তাঁদের সেবা করো। তাঁদের খেয়াল রাখো। তাঁদের ভালোবাসো। মা-বাবাকে মুখে বলো, ‘ভালোবাসি’। তাঁদের বুঝতে দাও যে তুমি তাঁদের সত্যিই ভালোবাসে।’’
তাঁর সেই বার্তা যে শুধু মুখের কথা নয় তা তিনি কাজে প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি সত্যিই অনুসরণযোগ্য।