#mankar – Explore : পঞ্চপাণ্ডবের স্মৃতি বিজড়িত মানকরের পাণ্ডব ক্ষেত্রতলা শক্তিস্থল
#mankar – Explore : পূর্ব বর্ধমান জেলার ঐতিহাসিক গ্রাম মানকর। শিল্প, স্থাপত্য এবং পারিবারিক উত্তরাধিকারের নিদর্শনে ভরপুর এই গ্রাম। এখানেই রয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের স্মৃতি বিজড়িত পাণ্ডব ক্ষেত্রতলা শক্তিস্থল। একবেলার জন্য ঘুরে আসতে পারেন। মন্দ লাগবে না।
এক নজরে
#mankar – Explore :
মানকরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
#mankar – Explore : ১৯ শতকের শুরুতে মানকরে প্রায় ১৫০০ পরিবারের বসবাস ছিল। তাদের প্রায় অর্ধেক যুক্ত ছিলেন তসর সিল্কের কাজের সঙ্গে। মানকরের সবচেয়ে বিখ্যাত পরিবারগুলির মধ্যে একটি ছিল ভক্তলাল গোস্বামীর। তিনি বর্ধমান মহারাজা কীর্তি চাঁদ রায়ের গুরু ছিলেন। তাঁর পরিবারকে এই অঞ্চলে বিস্তীর্ণ করমুক্ত জমি দেওয়া হয়েছিল। এলাকার প্রধান জমিদার হয়ে ওঠেন তিনি। অনেক পণ্ডিত ও শিক্ষিত ব্রাহ্মণ মানকরে এসে বসতি স্থাপন করেন। মানকর বিশাল আকারের কদমা তৈরির জন্য সুপরিচিত। প্রায় প্রতিটি পুজোয় নানা আকৃতির কদমা ব্যবহৃত হয় পুজোর উপাচারে। কালী ও দুর্গাপুজোর সময় এখানে তৈরি বিশাল কদমার কদর রয়েছে অন্যান্য শহরেও।
মানকরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্পটগুলির মধ্যে একটি হল আটচালা আনন্দময়ী কালীবাড়ি। মন্দিরের দেবী হলেন কবিরাজ পরিবারের পারিবারিক দেবতা। পরিবারের পূর্বপুরুষরা এই অঞ্চলের রাজ পরিবারের সদস্যদের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রদান করতেন। মন্দিরের কাছেই কবিরাজ পরিবারের ভগ্নপ্রায় বিশাল প্রাচীন অট্টালিকা রয়েছে। বাড়িতে একটি ঠাকুর দালান বা দুর্গা দালানও রয়েছে। মৃণাল সেনের ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবির কয়েকটি সিকোয়েন্সে ব্যবহৃত হয়েছিল এই দালান। বংশধর সুরজিৎ গুপ্ত জানিয়েছেন, একদা এই বাড়িতে পা রেখেছিলেন লর্ড ক্লাইভ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ।
আরও পড়ুন- চারশো বছর প্রাচীন মানকর কবিরাজ বাড়ির পুজো
বিশ্বাস পরিবারের বাড়িটির সংস্কার করা হয়েছে। বিশাল দোতলা দুর্গা দালান। এই পরিবারের দুর্গাপুজো প্রায় তিনশো বছরের পুরানো। পূর্বপুরুষ নীলমাধব বিশ্বাস এখানে এসে পরিবারের পত্তন করেছিলেন। নীলমাধবের নাতি মহেশ বিশ্বাসের সময়ে পরিবারের উত্থান হয়েছিল নজরকাড়া। মহেশই দুর্গা দালানের সাথে দুটি দেউল মন্দির এবং প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন।
মন্দির নগরী মানকর
#mankar – Explore : ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত মানকরে প্রায় ৪২ টি ইটের মন্দির নির্মিত হয়েছিল। বিশ্বাস প্রাসাদের কাছাকাছি দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলির দেয়ালে চমৎকার পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। প্রথমটি, স্থানীয় প্রমথ নাথ দত্ত পরিবারের পাঁচটি চূড়া বিশিষ্ট কাশীনাথ মন্দির, যেটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় কালের প্রকোপে মন্দিরের সম্মুখভাগের কেন্দ্রীয় খিলানের কাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কৃষ্ণলীলার দৃশ্য এবং ডান ও বাম প্যানেলে খোদাই করা শিবের মূর্তি এখনও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কিছুটা এগোতেই টেরাকোটা কাজে সমৃদ্ধ দেউলেশ্বর মন্দির। তবে সংস্কারের কাজে বেশ কিছু পোড়ামাটির কাজ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। প্রায় একই রকম মন্দির রয়েছে, ব্যানার্জী পাড়া দেউল মন্দির এবং মোড়ল পাড়া পঞ্চরত্ন মন্দির। বেশ কিছু আইভি এবং শ্যাওলা আচ্ছাদিত পরিত্যক্ত ইটের মন্দির গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এমনই একটি ধ্বংসাবশেষ স্থানীয়ভাবে রং মহল নামে পরিচিত। ভক্তলাল গোস্বামীর সময়ে নির্মিত, এটি একসময় বিস্তৃত রাধাবল্লভ মন্দির কমপ্লেক্স ছিল। বর্তমানে মন্দিরের চূড়া ও চত্বর আগাছায় ভরে গিয়েছে। এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একজোড়া ছোট অষ্টভুজাকার মন্দির। বিখ্যাত ভারততত্ববিদ ডেভিড ম্যাককাচিওন ১৯৭০ সাল নাগাদ বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন। সেগুলি দেখলে বোঝা যায় প্রাচীন মানকর নগরীর ঐতিহ্য।
মানকরের বিশেষ আকর্ষণ: পান্ডব ক্ষেত্রতলা শক্তিস্থল
#mankar – Explore : দেবী দুর্গার উপাসনা করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব। মহাভারতের বিরাট পর্বে উল্লেখ রয়েছে এই দেবী উপাসনার কথা। রাজ্য হারিয়ে যুধিষ্ঠির ১২ বছর বনবাসে ছিলেন। বনবাস শেষ হতেই দ্রৌপদী ও বাকি চার ভাইকে নিয়ে বিরাটনগরের পথে রওনা হলেন যুধিষ্ঠির। এর পর তাঁদের অজ্ঞাতবাস শুরু হবে। কেউ যাতে তাঁদের চিনতে না পারেন তাই নিজেদের নাম বদলে ফেললেন পঞ্চপাণ্ডব। তাঁদের নাম হল, জয়, জয়ন্ত, বিজয়, জয়ৎসেন ও জয়দ্বল।
আরও পড়ুন- পঞ্চপাণ্ডব কি সত্যিই এসেছিলেন পাণ্ডবেশ্বরে?
ঋষিদের উপদেশে অজ্ঞাতবাসের সাফল্য কামনায় যুধিষ্ঠির ‘দুর্গাৎ তারয়সে দুর্গে তৎ ত্বং দুর্গা স্মৃতা, জনৈ’ স্তব করে দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। কথিত আছে, পূর্ব বর্ধমানের মানকর গ্রামে শক্তি রূপে দেবী দুর্গাকে পুজো করেছিলেন পঞ্চপান্ডব। এই গ্রামে পঞ্চপান্ডব বিশ্রাম নিয়েছিলেন। দেবী দুর্গাকে পুজো করার পর তাঁরা একটি মন্দিরও নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের কাছে স্থানটি পান্ডব ক্ষেত্রতলা শক্তিস্থল নামে পরিচিত। প্রতিমাসে নবমীতে এবং জন্মাষ্টমীতে এখানে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এখানকার পুরোহিত জগবন্ধু চক্রবর্তী।
কিভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে গাড়িতে মানকর তিন ঘন্টার পথ। বুদবুদে হাইওয়ে থেকে সার্ভিস রোডে নামতে হবে। ডানদিকে প্রায় আড়াই কিমি গেলেই মানকর। দুর্গাপুর থেকে মানকর ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এক ঘন্টার পথ। এছাড়া রেলপথেও যোগাযোগ রয়েছে। মানকর স্টেশনে নামতে হবে ট্রেন থেকে। সেখান থেকে টোটো পেয়ে যাবেন গ্রাম ঘোরার জন্য।
মানকরের কাছাকাছি ঘুরে দেখার জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে অমড়ার গড় এবং ভালকি মাচান। অমড়ার গড়ে সদগোপ রাজা মহেন্দ্রনাথের রাজধানী ছিল। সেখানে একটি ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দির কমপ্লেক্স রয়েছে। ভালকিতে জঙ্গলের মাঝে রয়েছে একটি বিশেষ টাওয়ার। সম্ভবত এটি একটি ত্রিকোণমিতিক জরিপ টাওয়ার।
আরও পড়ুন- একদিনের জন্য ঘুরে আসুন ক্ষীরগ্রামের যোগাদ্যা মন্দিরে