করোনা তাড়াতে এসব আবার কি? কিন্তু একটা কথা কি ভেবে দেখেছেন? আসমুদ্র হিমাচলের প্রতিটি কোণে কোণে মানুষজন একই সময়ে একটি সাধারণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। কিছু না হোক, একাত্মতা তো বাড়ল!
সত্যি কথা বলতে কি জানেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই একাত্ম বোধটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে সামনের কয়েকটা দিনে। সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। সামনের কয়েকটা দিনে নিতান্ত দরকার না পড়লে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। বাড়িতে বাইরের কেউ এলে ভদ্রভাবে তাঁকে বিষয়টি বুঝিয়ে কয়েকদিন পরে আসতে বলুন। কোনওভাবেই যেন মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব এক মিটারের কম না হয়। কারণ, ভাইরাস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হোম কোয়েরান্টিনে না থাকলে সামনের কয়েকদিনে আমাদের দেশের অবস্থা ইতালি কেন তার চেয়েও খারাপ হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন ইতালির জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় নিতান্তই কম। তাছাড়া ইউরোপের এই দেশটি তথাকথিত ধনতান্ত্রিক দেশ। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশের তুলনায় অনেক উন্নত। তা সত্বেও কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সে দেশের।
প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩। পরের সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪। তৃতীয় সপ্তাহে বেড়ে হয় ২৫৮। ২২ মার্চ পর্যন্ত সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৮। এতদিন পর্যন্ত জানা যাচ্ছিল, কার থেকে কার সংক্রমণ হচ্ছে। অর্থাৎ বিদেশ থেকেই আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছিলেন সবাই। এবার কিন্তু কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে আমরা প্রায় এসে গিয়েছি। অর্থাৎ সামনের কয়েকদিনের মধ্যেই আর কোনও বিদেশ যোগ লাগবে না। যে কেউ আক্রান্ত হতে শুরু করবেন।
তাই সবার আগে দরকার এই ভাইরাসের ‘ব্রেক দ্যা চেইন’। সেটা করতে গেলে একমাত্র উপায় সবাই মিলে নিজেকে ঘরে স্বেচ্ছাবন্দী করে ফেলুন। আর সেটা করতে গেলে একাত্মবোধ খুব প্রয়োজন। অকারণে কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেন না। কারওর কাছাকাছি যাবেন না। প্রয়োজন মনে হলে মুখে মাস্ক পরে বেরোবেন। নিজের কথা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের কথাও ভাবুন। খেয়াল রাখুন, কোনওভাবে যেন আপনি নিজে সংক্রামিত না হন। অন্য কেউ যেন আপনার থেকে সংক্রামিত না হন। কি পারবেন না চ্যালেঞ্জটা নিতে? পারবেন নিশ্চয়ই। একটু চেষ্টা করুন, সবার জন্য।
বাড়িতে থাকার সময় কয়েকটি বিষয় একটু খেয়াল রাখবেন। ভাইরাস ওষুধে সারে না জানেন তো! আক্রান্তের ফুসফুসের কোষ যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে ভাইরাসের আরএনএকে দমিয়ে রাখতে পারে। কোষের শক্তি আসে মূলত প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে। তাই বেশি করে প্রাণীজ প্রোটিন খান। অর্থাৎ, মাছ, ডিম, চিকেন, মটন খান প্রাণভরে, নিশ্চিন্তে। কোনও বিধিনিষেধ নেই। আর খান শাক সবজি। তাহলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে। বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা বাড়বে। এই সময় আর একটি কাজ করুন। জানেন তো, আপনার মোবাইলটি হল জীবানুর আঁতুরঘর! নিয়মিত মোবাইল জীবানুমুক্ত করা দরকার। আমরা তো তার ধার ধারি না। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে পরিস্কার করতে পারেন। না থাকলে কড়া রোদে কিছুক্ষণ রেখে দিন মোবাইল। মনে রাখবেন, ৫৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না।
তবে একটা কথা, অহেতুক মাস্ক পরে ঘুরবেন না। সার্জিক্যাল মাস্কের ছিদ্রের থেকে করোনা ভাইরাসের আকার আরও ছোটো। তাই ঢুকে যাবে। কাপড়ের মাস্ক তো কোনও কাজেই লাগবে না। আর যা নিয়ে চর্চার শেষ নেই, সেই এন-৯৫ মাস্ক টানা পরে থাকলে দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হবে। কাজেই আক্রান্ত হলেই মাস্ক পরুন অথবা আক্রান্তের পরিচর্যার সময় অল্প সময়ের জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরতে পারেন।
+ There are no comments
Add yours