You are currently viewing পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান

পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান

পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান

দামোদর নদীর তীরে অবস্থিত আসানসোল শিল্প নগরী মূলত খনি শিল্পের জন্য সারা দেশে পরিচিত। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার সদর দফতর। আসানসোলে বহু মনোরম পর্যটন স্থান, মনোরম পিকনিক স্পট, মন্দির, পুরনো গীর্জা, সুন্দর পার্ক রয়েছে যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। জেলা জুড়েই এমন বহু পর্যটনস্থল রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

ভিড়িঙ্গী শ্মশানকালী মন্দির:

bhiringi

দুর্গাপুরের ব্যস্ত বেনাচিতি বাজারের পাশে ভিড়িঙ্গী কালীবাড়ি। আশ্রমিক পরিবেশ। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা ফলক অনুযায়ী, ভিড়িঙ্গি কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৫২ সালে। দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তেরা কালীপুজোর সময় এই মন্দিরে আসেন। তাছাড়া বছরের বিশেষ বিশেষ দিন, যেমন নীলষষ্ঠী, পয়লা বৈশাখে অগণিত মানুষ পুজো দিতে আসেন মন্দিরে। যাত্রীনিবাস রয়েছে। বাইরের দর্শণার্থীরা দরকার হলে রাতে থাকেন সেখানে। জানা যায়, একসময় জঙ্গলঘেরা ছিল ভিড়িঙ্গী গ্রাম। গ্রামের কুমোর বাঁধের শ্মশানক্ষেত্রে দলবদ্ধ ভাবে শবদাহ করতে আসতেন মানুষজন। দেড়শো বছরেরও বেশি সময় আগে গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয়কুমার রায় সেই জঙ্গলের মাঝে শ্মশানে তালপাতার ছাউনি দিয়ে কালী মন্দির নির্মাণ করে সাধনা করতে শুরু করেন। বাংলা ১২৫৯ সালের অগ্রহায়ন মাসের অমানিশায় পঞ্চমুন্ডীর বেদির উপরে মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে যা ভিড়িঙ্গী শ্মশান কালী মন্দির নামে পরিচিত হয়।

ঘাঘর বুড়ি মন্দির:

ঘাঘর বুড়ি মন্দির আসানসোল শহরের উপকণ্ঠে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ঠিক ধারে নুনিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা কালী। এটি আসানসোলের প্রাচীনতম মন্দির। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার মন্দিরে পুজো হয়। এছাড়া প্রতি বছর ১ মাঘ মন্দিরের সামনের মাঠে বসে ঘাগরবুড়ি চন্ডীমাতার মেলা। ঘাঘর বুড়ি হলেন বাংলার অন্যতম লৌকিক দেবতা। মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ১৬২০ সালে। তবে তারও বহু আগে থেকে গাছতলায় মা ঘাঘড় বুড়ির পুজো হয়ে আসছে বলে জানা যায়। কোনও মূর্তি নেই। শুধু তিনটি শীলা রয়েছে।

মাইথন:

মাইথন বাঁধটি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানায়। এটি ১৫৭১২ ফুট (৪৭৮৯ মিটার) দীর্ঘ এবং ১৬৫ ফুট (৫০ মিটার) উঁচু। এই বাঁধটি বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে।  এখানে একটি ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যা পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। বাঁধটি বরাকর নদীর উপর নির্মিত। পর্যটকদের বরাবরের প্রিয় পাহাড়, জল, জঙ্গল ঘেরা মাইথন।

গড় জঙ্গল:

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এই জঙ্গলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ভাগবত ও পুরাণ অনুযায়ী মহামুনি মেধাসের নির্দেশে সত্যযুগে রাজা সুরাট গড় জঙ্গলের ভিতরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। রাজা সুরাটের তৈরি মন্দিরে আধুনিক যুগে ফের পুজো শুরু করেন যোগীরাজ গিরি। রয়েছে টেরাকোটা সমৃদ্ধ প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো মন্দির। এখানে অতীতে ১৬টি মন্দির ছিল। এখন আছে মাত্র দুটি, শ্যামারূপা মন্দির এবং একটি শিব মন্দির। বন দফতরের উদ্যোগে প্রায় ১০কিমি ট্রেকিং রুট তৈরি করা হয়েছে এই জঙ্গলে। এই জঙ্গলের শেষ প্রান্তে রয়েছে ইছাই ঘোষের দেউল।

ইছাই ঘোষের দেউল:

ইছাই ঘোষ শুধু ধর্মমঙ্গল কাব্যের নায়ক ছিলেন তাই নয়, একাদশ শতকের ইতিহাসে তাঁর অবদানের উল্লেখ আছে। বাংলায় তখন পাল রাজা মহীপালের রাজত্ব। ইছাই ঘোষ তখন এক জন স্বাধীন সামন্ত রাজা। তিনিই ছিলেন এই এলাকার গড়ের অধিপতি। এই গড় জঙ্গলেই নাকি তাঁর দুর্ভেদ্য ঘাটি ছিল। জনশ্রুতি, তাঁরই প্রতিষ্ঠিত শিখর ধারার দেউলটি ‘ইছাই দেউল’ নামে পরিচিত। দেউল ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটনস্থল। দেউলটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা জুড়ে রয়েছে গহন জঙ্গল। পাশেই অজয় নদ। পুরো এলাকাটা ছোট টিলার মতো। জঙ্গলের মাথায় দেউলের চূড়াটি দেখা যায়। দেউল পার্কে থাকার জন্য কটেজ এবং গেস্ট হাউস আছে। প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপরে জেলা পরিষদ তৈরি করেছে পার্ক। পাশেই বনবিভাগের ডিয়ার পার্ক। সেখানে হরিণ এবং ময়ূর ঘুরে বেড়ায়।

চুরুলিয়া:

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান এবং তাঁর স্ত্রী প্রমিলা দেবীর সমাধি স্থল রয়েছে চুরুলিয়ায়। কবির অনেকগুলি পাণ্ডুলিপি, পদক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গ্রামের নজরুল অ্যাকাডেমিতে সংরক্ষিত ছিল। এখন সে’সব কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে গিয়েছে। নজরুল অ্যাকাডেমি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মনে করা হয়, প্রাচীনকালে চুরুলিয়ায় একটি দুর্গ ছিল। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে আফগান সর্দার শের খানের হাতে পড়ে। গ্রামের একটি স্তূপ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ বহন করে চলেছে বলে মনে করা হয়। মুসলিম শাসনকালে চুরুলিয়ায় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এটি ইসলামী স্থাপত্যের একটি উদাহরণ।

রামকৃষ্ণ মিশন:

আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন হাই স্কুল ছেলেদের জন্য একটি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়। এটি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আসানসোলের রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত স্কুল। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত। প্রাথমিকভাবে মিশনের তত্বাবধানে একটি অনাথ আশ্রম এবং মেয়েদের জন্য একটি স্কুল ছিল। পরে ছেলেদের স্কুল চালু হয়। ১৯৪৪ সালে স্কুলটি একটি হাই স্কুলে উন্নীত হয়। (ছবি সৌজন্য: পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন)

Leave a Reply