প্রচন্ড গরম। বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে । পরিবেশ প্রেমীরা নানান ভাবে গাছ লাগাতে বলছেন। শুভ উদ্যোগ । অনেকেই এই বর্ষায় গাছ লাগানোর কথা ভাবছেন। আমাদের উচিত উষ্ণায়ন যাতে কমে তার সমস্ত দিকটা নিয়ে সকলের এগিয়ে আসা। সেদিন আর বেশী দেরী নেই যেদিন চড়া দামে জল বিকোবে অন লাইনে ।
গত ২০ জুন ২০১৯ পার্লামেন্টে রাস্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘‘নীতি আয়োগ” এর সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতের ২১টা বড় শহরের। চেন্নাই ,বেঙ্গালুরু, , গুরুগ্রাম ,রাজস্থানে এই সব শহরে শুরু হতে চলেছে হাহাকার । বাদ যাবে না রাজধানী দিল্লীও। যে শহরগুলি আপাত দৃষ্টিতে বেশী এগিয়ে , কর্মসংস্থান , তথাকথিত সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে সেই শহরগুলিতেই অশনি সংকেতের কথা শুনিয়েছে “নীতি আয়োগ”। তারা আরও জানিয়েছে আর ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষ জলের সমস্যায় ভুগবে। বহু বড় শহরে নদী ,জলাশয়, জঙ্গল সংকটে। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন ‘একুশ শতকের বড় চ্যালেঞ্জ জলসঙ্কট। ‘
শুধু গাছ লাগালেই হবে না। নিশ্চয়ই গাছ লাগাতে হবে আমাদের সবাইকে। তবে সেটাই একমাত্র পরিত্রাণের উপায় নয়। আনুষঙ্গিক অনেক কিছুতেই নজর দিতে হবে আমাদের। ঠিক এখন থেকেই।
যেমন-
ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটস ছেড়েই দিলাম। শহর জুড়ে গড়ে ওঠা কংক্রিটের জঙ্গল কি পরিবেশ দূষণের কারণ নয়॥
কংক্রিটের দূষণ হচ্ছে কিভাবে !
শহরাঞ্চলে চাকরি করতে এসে চাকরি শেষে, সেখানেই রয়ে যান । বাড়ি ঘর করে পরিবার নিয়ে শুরু করেন নতুন সংসার। কিন্তু ছেলে রা চাকরি করতে চলে যান অন্য শহরে । বিয়ের পর বৌ নিয়ে চাকরিস্থলেই বাসা বাঁধে। মেয়েরাও বিয়ের পর অন্যত্র চলে যান। বাবা মা স্বপ্নের নীড় আগলে বসে থাকেন । এভাবেই দিনের পর দিন কংক্রিটের বাড়িঘর বেড়েই চলেছে। মানুষ স্বভাববশত প্রথমত, কি চাই জানে না। দ্বিতীয়ত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী করে ফেলে। বাড়ি তৈরীতে তো কথাই নেই। প্ল্যান থেকে এদিক ওদিক তো হবেই। কিন্তু এত খরচা করে সময় নষ্ট করে পরিশ্রম করে বেশীর ভাগ বিশালাকার বাড়িতে মানুষের সংখ্যা হয়তো মাত্র ২ জন ।
এই সব বাড়ির আবার রকম ফের আছে । কোনও টা নালি বন্ধ করে তৈরী বাড়ি , পাশের জমি থেকে কিছু জায়গা নিজের করে নেওয়া বাড়ি, রাস্তায় পাঁচিল বাড়িয়ে নেওয়া বাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই মুহূর্ত থেকেই কংক্রিট দূষণের দিকে নজর দেওয়া দরকার। যে বাড়িতে ঘর অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আছে সেগুলি কম ভাড়ায় বাড়ি ভাড়া দিতে হবে যাতে আর একজন সেখানে থাকার সুযোগ পায় অনায়াসে। এমন যেন না হয়, তিনি ভাড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে ভাবতে শুরু করলেন একটি ফ্ল্যাট কেনার কথা। ১০-১২ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার থেকে ১৫ হাজার টাকা ইএমআই দেওয়া ভালো, এমন যেন তাঁকে ভাবতে না হয়। তাই সরকারের উচিত বাড়িভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা। যেখানে সেখানে ফ্ল্যাট গজিয়ে ওঠাতেও যেন অনুমোদন না দেওয়া হয়।
বাড়ি তৈরি হোক বা ফ্ল্যাট তৈরি হোক, আদতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। একদিকে যেমন মাটির তলার জল তুলে বা পুরসভার অর্থ খরচ করে পরিশ্রুত করা জল দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে মাটির পরিসর কমে যাওয়ায় বৃষ্টির জল বা বর্জ্য জল মাটির নীচে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে জলস্তর রিচার্জ হচ্ছে না। মাটির নীচে জলের পরিমাণ কমছে। কংক্রিট দিয়ে সব ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। মাটির আয়তন কমে যাচ্ছে।
জল সংরক্ষণের কথা যখন উঠলই তখন কিভাবে তা করা যাবে সেদিকটাও ভাবা দরকার।
কোন বস্তুর ব্যবহার না হলে সেটি দিন দিন নষ্ট হয়। সেদিকে নজর কারও নেই।
সবাই আমরা চাইছি জলের অপচয় বন্ধ হোক । কিন্তু কিভাবে ?? নিজেদের ঘর থেকেই শুরু হোক প্রথম পদক্ষেপ। ।
প্রায় সব বাড়িতে জল ট্যাঙ্ক আছে । সেগুলো মোটা প্লাস্টিকের । খোলা আকাশের নীচে সহজেই জল গরম হয়। আবার ছাদের পাইপে থাকা জলও গরম হয়। ফলে প্রত্যেকেই গরম জল কল খুলে ফেলে দেন , ঠাণ্ডা জলের সন্ধানে। এই ভাবে প্রত্যেক বাড়ি প্রচুর জল নষ্ট হচ্ছে।
এই জল নষ্ট হতে দিলে চলবে না । বাড়ি ফ্ল্যাট নির্বিশেষে সবাইকে ট্যাঙ্কের ওপর ছাউনি দিন। ছাদের পাইপেও ছাউনি দিতে হবে । এতে অনেক জল বাঁচবে। একেবার ভাবুন এত লক্ষ লক্ষ বাড়িতে প্রত্যেক সদস্য যদি একবালতি জল না ফেলেন তাহলে কতবালতি জল বাঁচানো গেল।
এর ফলে যে জল বাঁচবে সেই জল নিজেদের আসে পাশে যেখানে জল থাকে না সেই সব এলাকার মানুষের কাজে আসবে । যেমন আসানসোল, উখড়া সহ যে সব জায়গায় গ্রীষ্মকালে জল থাকে না, সেই সব জায়গায় এমন নষ্ট হওয়া জলও কত গুরুত্বপূর্ণ, কত মূল্যবান বলুন তো?
+ There are no comments
Add yours