নকশি কাঁথার মাঠ নিয়ে সদাব্যস্ত ৮৩ বছরের বাসন্তীদেবী
দেশভাগ তখনও হয়নি। ঢাকা থেকে কলকাতায় ছিল অবাধ যাতায়াত। স্টিমারে আসতে হত। রাস্তায় জ্বলত গ্যাসের আলো।
জন্ম ঢাকার বারুদি গ্রামে। ৭ বছর বয়সে ঢাকা থেকে ছোট্ট ময়না অখন্ড ভারতবর্ষের জলপাইগুড়ি শহরে জ্যাঠতুতো দাদার বাড়িতে চলে আসে কাকার হাত ধরে। তারপর বড় হওয়া, পড়াশোনা সবই করেছেন জলপাইগুড়ি শহরে। জ্যাঠতুতো দিদি সুশীলা রায়ের কাছে সেলাই শিখেছেন।

বিয়ের পর শিলিগুড়ি শহরে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। বিয়ের পর নাম হল বাসন্তীদেবী কর্মকার। বড় পরিবার। পাঁচ মেয়ে, পাঁচ ছেলে। বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ। ওপার বাংলা থেকে আত্মীয়ের ছেলে মেয়েরা, তাঁদের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছে। তখন রেওয়াজ ছিল এমনটাই। সব মিলিয়ে এত বড় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলেছেন একা হাতে। সব সামলে তাঁর রুটিন ছিল, সন্ধ্যা বেলা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাওয়া। ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করো’ কিংবা ‘ও আমার দেশের মাটি’। আর ছিল সেলাই। এমনটাই জনিয়েছেন, ছোট মেয়ে চন্দনা কর্মকার।

মেয়েদের ফ্রক বানিয়ে দেওয়া, শাড়িতে ডিজাইন তোলা, বিছানার চাদরে ফুল ইত্যাদি নানান ধরণের সেলাইয়ে ব্যস্ত রাখতেন নিজেকে। দেশে স্বাধীনতা আসার পর নানান উত্থান পতন দেখেছেন। সেই সব ছবিও উঠে এসেছে তাঁর শিল্পে। আমিষ হোক বা নিরামিষ, রান্নায় তার জুড়ি মেলা ভার।
এরপর গড়িয়েছে বহু বছর। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই প্রতিষ্ঠিত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সবাই দেশের নানা প্রান্তে। তিনি শিলিগুড়িতেই থাকেন। কিন্তু লকডাউনের আগে ছোট মেয়ের কাছে এসেছেন দুর্গাপুরে। এখন তিনি এখানেই আছেন। বয়স ৮৩ বছর। সমস্ত রকম সেলাই তাঁর নখদর্পনে। এই কয় মাসে শাড়িতে ফুল তুলেছেন, ব্লাউজ পিস, চাদর, আরও যে কত কি তার ইয়ত্তা নেই।
এমনিতে তিনি নানা ধরণের সেলাইয়ে দক্ষ। তবে এখন চোখের সমস্যার জন্য শুধু কাঁথা স্টিচ নিয়েই কাজ করে চলেছেন। বাসন্তীদেবী বলেন, সেলাই আমার নেশা। বাড়ির সামান্য কিছু কাজ করে সারাদিন সেলাই নিয়েই থাকি। এখন সুতো পাওয়া যাচ্ছে না, কাপড় ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে সেলাইয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে।