এক এবং একমাত্র পথ এখন লকডাউন
করোনা মহামারী ঠেকাবার একমাত্র উপায়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। যদিও সামাজিক দূরত্ব শব্দবন্ধই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা হু কিন্তু শারীরিক দূরত্বের কথাই বলেছে। সে যাই হোক, এই দূরত্বের যে কি গুরুত্ব ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু দেশ তা বুঝে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের পোড়া কপাল! এ’দেশের অনেকেই বুঝতে চাইছেন না। অথচ এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বজায় রাখা।
এই ভাইরাস বাতাসে ভেসে ছড়ায় না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ক্যারিয়ার চাই। যাকে অবলম্বন করে অন্যের শরীরে গিয়ে পৌঁছায়। আমরা সবাই জানি, করোনা ভাইরাস ছড়ায় মানুষের থুতু, লালা, হাঁচি, কাশির মাধ্যমে। যদি কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে এক মিটারের কম দূরত্বে থাকে তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে। তাই এই শৃঙ্খলটাকে ভাঙা জরুরি যাতে ভাইরাস একদেহ থেকে অন্য দেহে ছড়াতে না পারে। সেজন্যই পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা এত জরুরি। কেউ হয়তো ভাইরাসে আক্রান্ত, অথচ তাঁর শরীরে কোনও উপসর্গ নেই। অন্যরা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু তিনি সংক্রমণ ছড়িয়েই চলেছেন। অথচ দূরত্ব বজায় থাকলে এই সংক্রমণের ভয় আর থাকে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, উপসর্গ দেখা দিলেই কোয়ারান্টাইনে যাওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ কোয়ারান্টাইনে যাওয়া নিয়েই তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। মানুষকে বুঝতে হবে, কোয়ারান্টাইনে যাওয়া মানে নিজেকে বাঁচানোর পাশাপাশি নিজের প্রিয়জনদেরও রোগ থেকে দূরে রাখা। থুতু বা লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যতক্ষণ না আসছে ততদিন কোয়ারান্টাইনে থাকা জরুরি। রিপোর্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা হবে। আসলে সংক্রমণ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, মানুষ যত বেশি সচেতন হবে তত দ্রুত মারণ ভাইরাসকে ঠেকানো যাবে।
ভাইরাসের এক দেহ থেকে অন্য দেহে সংক্রমণ আটকাতে শৃঙ্খলটা কেটে ফেলা খুব জরুরি। সেটা করতে গেলে লকডাউনের বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউন মানে একঘেয়েমী। সঙ্গে অবসাদ। সেজন্য ঘরে আড্ডা দিতে হবে। যার যা ভালো লাগে, সে ছবি আঁকা হোক, বই পড়া হোক, সিনেমা দেখা বা গাছের পরিচর্চা, সেটাই করা উচিত। কারণ মন ভালো থাকলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়বে। সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব এড়িয়ে চলতে হবে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হবে। এই সময় সব কিছু মনের মতো হবে না। তাই অসন্তোষ দেখালে হবে না।