Tourist places near Bardhaman

Tourist places near Bardhaman. বর্ধমানের জনপ্রিয় স্থানগুলি

Tourist places near Bardhaman

Tourist places near Bardhaman. পর্যটনের ইতিহাস বহু পুরনো। যুগ যুগ ধরে মানুষ নতুন জায়গা দেখার জন্য, অবসর বিনোদনের জন্য, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করে আসছেন। সারা বিশ্বেই পর্যটন এখন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্ধমান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন নানা দর্শনীয় স্থান। জেলা, রাজ্য, দেশ তো বটেই, ভিন রাজ্য এমনকী বিদেশ থেকেও পর্যটকরা আসেন এই দুই জেলায়।

কার্জন গেট: কার্জন গেট যা বিজয়তোরণ নামেও পরিচিত। শ্রী বিজয় চাঁদ মহতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে, বর্ধমানের মহারাজা ১৯০৩ সালে জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে এই বিশাল তোরণটি তৈরি করেছিলেন। সাবেক রাজবাটি থেকে ১ কিমি দূরে অবস্থিত সেটি। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটির নামকরণ করা হয় কার্জন গেট হিসাবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বিজয় তোরণ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। গেটের আর্ক ৮ টি গোল আকৃতির স্তম্ভ ধরে রেখেছে। তিনটি নারী মূর্তি, তলোয়ার, নৌকা এবং কুঠার কাঁধে হাতে হাতে, কৃষি ও বাণিজ্যের অগ্রগতির সূচক। কাঠামোটি ইতালির রাজধানীতে নির্মিত একটি গেট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছিল।

শের আফগানের সমাধি: বর্ধমান শহরের অন্যতম পরিচিত ঐতিহাসিক স্থান হল শের আফগানের সমাধি। সমাধিটি রাজবাটির কাছে পীর বাহারমের পাশে অবস্থিত। মোঘল আমলে ১৬০৬ সালে জাহাঙ্গীরের পালক-ভাই কুতুবুদ্দীন খান কোকাকে বাংলার রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হয়। তখন বর্ধমানের জায়গিরদার ছিলেন তুরস্কের শের আফগান ইস্তাজি। তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেসার খ্যাতি ছিল তাঁর সৌন্দর্যের জন্য। কুতুবুদ্দীন খান কোকা বাংলায় আসার পরেই আসেন বর্ধমানে। ১৬১০ সালে বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশনের কাছে মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে শের আফগান ও কুতুবুদ্দিনের মধ্যে একটি মারাত্মক ডুয়েল লড়াই হয় এবং উভয়েরই মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী হন। তাঁকে নূর জাহান উপাধিতে ভূষিত করা হয়। শের আফগান এবং কুতুবুদ্দীনের সমাধি আজও পাশাপাশি অবস্থান করছে। এএসআই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে।

সর্বমঙ্গলা মন্দির: ১৭০২ সালে মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন। বর্ধমানের ডিএন সরকার রোডে মন্দিরটি অবস্থিত। দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি প্রায় ১০০০ বছর পুরনো। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির হিসাবে পরিচিত। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বাগদিরা পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিল। সেটিকে পাথরের খণ্ড ভেবে তার উপরে শামুক–গুগলি থেঁতো করতো তারা। সেই সময় দামোদর নদ লাগোয়া চুন তৈরির কারখানার জন্য শামুকের খোলা নেওয়ার সময় শিলামূর্তিটি চলে যায় চুন ভাটায়। তখন শামুকের খোলের সঙ্গে শিলামূর্তিটি পোড়ানো হলেও মূর্তির কোনও ক্ষতি হয়নি। কথিত আছে, সেই রাতে স্বপ্নাদেশ পান তৎকালীন বর্ধমান মহারাজা সঙ্গম রায়। তিনি শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে টেরাকোটার নিপুণ কারুকার্য খচিত সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ মহতাব। ক্রমে ক্রমে মূল মন্দিরের আশেপাশে গড়ে ওঠে নাট মন্দির, শ্বেত পাথরের তৈরি রামেশ্বর ও বাণেশ্বর নামে দুটি শিব মন্দির। কালো পাথরে তৈরি হয় মিত্রেশ্বর, চন্দ্রশ্বর ও ইন্দ্রেশ্বর নামে আরও তিনটি শিব মন্দির।

১০৮ শিব মন্দির: সারা দেশে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু’টি জায়গায় আছে। দু’টি জায়গাই রয়েছে পূর্ব বর্ধমানে। প্রথমটি হল সিউড়ি রোডে বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাট বাস টার্মিনাসের কাছে। দ্বিতীয়টি হল কালনায়। দু’টিই নির্মাণ করেছে বর্ধমান রাজপরিবার। নবাবহাটের ১০৮টি শিবমন্দির আয়তাকারে এবং কালনার মন্দিরগুলি বৃত্তাকারে সাজানো। বর্ধমানের মন্দির ১৭৮৮ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন মহারাজা তিলোকচন্দের স্ত্রী মহারাণী বিষ্ণান কুমারী। অন্যদিকে, কালনার মন্দির বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র ১৮০৯ সালে নির্মাণ করান। কথিত আছে, বিষ্ণুপুরে রাজকীয় সম্পত্তি স্থানান্তর ও মালিকানা উদ‌্‌যাপনের জন্য এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। মন্দিরটির গঠনশৈলীতে বাংলার প্রখ্যাত আটচালা শিল্পের বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে।খাজা আনোয়ার বেড় (নবাব বাড়ি): খাজা আনোয়ার বেড় বা নবাব বাড়ি বর্ধমানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এবং প্রায় তিনশো বছরের পুরানো স্থাপত্য।

দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে আওরঙ্গজেব পুত্র মুয়াজ্জেম প্রথম শাহ আলম বাহাদুর শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। মাত্র ছ’বছর রাজত্ব করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হয় রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃবিরোধ। জ্যেষ্ঠ পুত্র আজিম-উস-শান সিংহাসনে বসেন। এক বছরের মধ্যে তিনিও ভাই জাহাঙ্গির শাহের চক্রান্তে নিহত হন। আজিম-উস-শানের পুত্র ফারুখ শিয়ার জাহাঙ্গির শাহকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেন।

দিল্লির এই ভ্রাতৃঘাতী গৃহবিবাদে দেশ জুড়ে গোলযোগ তাঁর আঁচ এসে লাগে বাংলার বর্ধমানেও। এখানে পাঠান সর্দারদের প্রধান রহিম খান মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ফারুখ শিয়ার বিদ্রোহ দমনে দুই বিশ্বস্ত সেনাপতি খাজা সৈয়দ আনোয়ার ও খাজা আবুল কাসেমকে পাঠান। শহরের দক্ষিণ দামোদর এলাকায় শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। রহিম খান সন্ধি প্রস্তাব পাঠালে যুদ্ধ থামে। কিন্তু রহিম এই সুযোগে হত্যা করেন দুই মোঘল সেনাপতিকেই। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার দুই সেনাপতিকে শহিদ আখ্যা দেওয়া হয়। ফারুখ শিয়ারের নির্দেশে বর্ধমান শহরের বেড় এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা জমির উপরে লক্ষাধিক স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। দুই সেনাপতির বংশধরদের ‘নবাব’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের জন্য তৈরি হয় রাজকীয় প্রাসাদ, মকবরা, বাঁধানো সরোবর, ফুলবাগান। মুঘল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইন্দো-সিরীয় আঙ্গিক ও মিনার শৈলীর সঙ্গে বাংলার দোচালা মন্দিরের স্থাপত্য মিশিয়ে গড়ে উঠেছে সৌধ। প্রতি বছর পয়লা মাঘ মেলা বসে। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হয়।

টাউন হল: টাউন হলটি ১৮৯০ এবং ১৮৯৪ এর মধ্যে নির্মিত হয়। লালা বংশগোপাল নান্ডের স্মৃতিতে এই হল নির্মিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ২৫ মে হলটি বর্ধমান পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে পুরসভা এই হলের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে। শহরের অন্যতম বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে এই হল।কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির: কঙ্কালেশ্বরী মন্দিরটি বর্ধমান শহরের কাঞ্চন নগরে অবস্থিত। মন্দিরটি বহু প্রাচীন। তবে কালীমূর্তিটি পাওয়া যায় ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২০ বঙ্গাব্দ)। দামোদর নদের বন্যার সময় বর্ধমান শহরের পশ্চিমে নদীগর্ভ থেকে এই কালী মূর্তিটি পাওয়া যায়। মূর্তিটির বয়স আজ পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়নি। মূর্তিটি তিন ফুট চওড়া ও পাঁচ ফুট লম্বা একটি অখণ্ড পাথর খোদিত বিগ্রহ বিশেষ। দুই দিকে চারটি করে, মোট আটটি হাত আছে। মূর্তিটি পাথরে খোদিত এবং মানব কঙ্কালের মতো দেখতে। বিগ্রহটি অষ্টভূজা, গলায় নরমুন্ডমালা, পদতলে শিব ও তার দুইপাশে দুইজন সহচরীর মূর্তি অবস্থিত। আটটি হাতে নরমুণ্ড, শঙ্খ, চক্র, ধনু, খড়্গ ইত্যাদি রয়েছে। প্রতিমার দেহে শিরা উপশিরার নিখুঁত ভাস্কর্য বর্তমান। মন্দিরে নয়টি চূড়া থাকায় এটি নবরত্ন মন্দির নামে পরিচিত।

ভালকি মাচান: আউশগ্রামের ভালকি মাচান প্রকৃতির মধ্যে একটি বিশাল নির্জন জঙ্গলে ঘেরা জায়গা। ভালকি গ্রাম থেকে ঠিক ২ কিমি দূরে এই জঙ্গল। প্রাচীন পোড়া ইটের তৈরি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। বর্ধমানের রাজাদের প্রিয় ভালুক শিকারের জায়গা বলে বিশ্বাস করা হয়। শাল-পিয়ালের জঙ্গলের মধ্যে মাচা তৈরি করে শিকার করা হতো। গুসকরা থেকে ভালকি মাত্র ২২ কিমির রাস্তা। আবার পারাজ থেকে ডান দিকে অভিরামপুর হয়ে সোজা ভালকি মাচান যাওয়া যায়, দূরত্ব মাত্র ১৬ কিমি। ভালকির জঙ্গলে থাকার জন্য মাত্র একটিই রিসর্ট, ‘অরণ্যসুন্দরী’। সূর্য ডুবে গেলে কার্যত সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। শুধু দূর থেকে ভেসে আসে আদিবাসীদের ধামসা মাদলের আওয়াজ। রিসর্টে বসেই দেখা যায় ভল্লু রাজার দুর্গ। পাশেই বিশাল জলাশয়। বোটিং করা যায়। জলাশয়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে সুন্দর নয়নাভিরাম উদ্যান।

চাঁদনী পার্ক, জলটুঙ্গি: আউশগ্রামের দিগনগর গ্রামে একটি ছোট লেকের মাঝে গড়ে উঠেছে জলটুঙ্গি, চাঁদনী পার্ক।  ১৭১০ সাল নাগাদ মহারাজা কীর্তিচাঁদ এটি নির্মাণ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, রানী এসেছিলেন রাজস্থান থেকে। এই বাংলায় এসে তিনি রাজস্থানী স্থাপত্য ও সংস্কৃতির অভাব অনুভব করতেন। তা পূরণের জন্য রাজস্থানের আবহ তৈরি করার জন্য জলটুঙ্গি নির্মাণ করান রাজা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রশাসন এখানে লাইট ও সাউন্ড শো চালু করে। থাকার জন্য রিসর্টও গড়ে উঠেছে। একদিনে বেড়ানোর জন্য আদর্শ জায়গা।

কৃষ্ণসায়র ইকোলজিকাল উদ্যান: বর্ধমান শহরে কৃষ্ণসায়র ইকোলজিকাল উদ্যান অবস্থিত। কৃষ্ণরাম রায় ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে একটি ফরমান অর্জন করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি বর্ধমান ও আরও কিছু পরগনার জমিদার ও চৌধুরী নিযুক্ত হন। ১৬৯১ সালে তিনি প্রায় ৩৩ একর জমিতে একটি বিশাল কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করেছিলেন। কৃষ্ণসাগর নামে নামকরণ করা হয় সেই হ্রদের। পরে সেটাই কৃষ্ণসায়র হিসাবে পরিচিতি পায়। এটি শহরের সেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য সহ একটি জনপ্রিয় উদ্যান। হ্রদের চারদিকে গাছে ঘেরা। হ্রদের পাশের বেঞ্চে বসে জলাশয়ের শীতল বাতাস উপভোগ করার আনন্দই আলাদা।

রমনাবাগান ইকো পার্ক: এটি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে পার্ক। বহু হরিণ আছে। ডিয়ার পার্কও বলা হয় তাই। এছাড়া চিতাবাঘ, ভাল্লুক, কুমির, চিতল হরিণ, বিভিন্ন ধরণের পাখি আছে। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে এই বনাঞ্চল অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি পায়৷ বর্তমানে রমনা বাগানের নাম দেওয়া হয়েছে বর্ধমান জুলজিক্যাল পার্ক৷ রমনাবাগানকে অনেকেই চিড়িয়াখানা বলেন৷ কিন্তু এটি তৈরি হয়েছিল মূলত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধার হওয়া পশু-পাখিদের রাখা ও চিকিৎসার জন্য৷ পরে এটি চিড়িয়াখানা হয়ে যায়৷ দর্শক আসতে শুরু করে।

গোলাপবাগ (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস): বর্ধমানের গোলাপবাগ একটি অত্যন্ত প্রিয় পর্যটন স্থান। ১৮৮৩ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মহাতাব বোটানিকাল এবং প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কিত এই উদ্যানটি গড়ে তোলেন। বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডালটন হুকার এখানে এসে ১২৮ ধরণের গাছ তালিকাভুক্ত করেন। গোলাপবাগ ছিল একসময় বর্ধমানের রাজার প্রমোদ কানন। অবসর সময়ে রাজা-রানীরা ঘুরে বেড়াতেন প্রকৃতির কোলে। বর্তমানে এখানেই রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মোরামের রাস্তায় পড়েছে পিচের প্রলেপ। গোলাপবাগকে ঘিরে রেখেছে পরিখা।ক্যাথলিক চার্চ: বর্ধমান শহরের বিজয় তোরণের কাছে প্রায় দু’শো বছর আগে গড়ে ওঠে ক্যাথলিক চার্চ। লাল ইটের গির্জাটি ১৮১৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন চার্লস স্টুয়ার্টের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। বড়দিনের সময়ে এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শহরের মানুষ সমবেত হন।

ঝুলন্ত রেলওয়ে ওভার ব্রিজ: আধুনিক কালে গড়ে ওঠা ঝুলন্ত রেলওয়ে ওভার ব্রিজ অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। মুম্বইয়ের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত কেবল ব্রিজ হিসাবে বিবেচিত হয়। বর্ধমান-আসানসোল লাইনের উপর কাটোয়া রোডে গড়ে ওঠা সেতুটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮৯ মিটার। চার লেনের এই সেতু তৈরি করেছে কেবল স্টেট বিভাগের অধীনে থাকা ‘রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড’। রেল লাইন থেকে এই সেতুর উচ্চতা সাড়ে ৬ মিটার। সেতুর দু’পাশে দুটি পিলার থেকে কেবলের মাধ্যমে সেতুটিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখতে অনেকটা দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মতো।

কৃষক সেতু ও দামোদর নদী: দামোদর নদীর তীরে বর্ধমান শহর। জেলার দক্ষিণাঞ্চল এবং বাঁকুড়া, আরামবাগকে সংযুক্ত করতে নদীর উপর ১৯৭৮ সালে কৃষক সেতু নির্মিত হয়। শীতে ব্রিজের কাছে নদীর বালুচরে পিকনিক করতে আসেন অনেকে। বর্ধমান শহরে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ হল এই সেতুটি।

অট্টহাস সতী পীঠ মন্দির: অট্টহাস সতী পীঠ মন্দিরটি কাটোয়া মহকুমার অধীনে কেতুগ্রামের নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণডিহি গ্রামে অবস্থিত। একটি বনের মধ্যে এই মন্দিরটি অবস্থিত। এর উত্তরে ঈশাণী নদী ও কিছুটা দূরে শ্মশান। শীতে বহু পরিযায়ী পাখি এখানে আসে। মন্দিরের আধ্যাত্মিক পরিবেশ দর্শণার্থীদের হৃদয় এবং মনকে শান্তি দেয়। কথিত আছে, এখানে সতীর অধঃ ওষ্ঠ (অধর / নিচের ঠোঁট) পতিত হয়। এক সময় এই জায়গার নাম ছিল খুলারামপুর বা তুলারামপুর। পরবর্তীতে এই গ্রামের নাম হয় দক্ষিণ ডিহি হয়। এই গ্রামের কিছু কৃষক ঈশানি নদীর ধারে অবস্থিত জমিতে চাষ করতে গিয়ে এক সাধুবাবাকে জঙ্গলে ধ‍্যানমগ্ন অবস্থায় দেখতে পায়। সাধুবাবাকে গিয়ে প্রণাম করেন করেন তাঁরা। সাধুবাবা এখানে যজ্ঞ করেন। যজ্ঞ শেষে তিনি যজ্ঞস্থানে একটি ত্রিশূল পুঁতে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। চলে যাবার আগে বলে যান, এটি একটি সতীপীঠ। সারা বছর এখানে ভক্তরা আসে। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এ পাঁচ মাস এখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়। দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এখানে থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে। মন্দির থেকে ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

কালনা রাজবাড়ি মন্দির: ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত অম্বিকা কালনা একসময় প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ বন্দর শহর হিসাবে খ্যাতিলাভ করেছিল। এই শহরে বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। বাংলা পোড়ামাটির স্থাপত্যের কয়েকটি সেরা নমুনা রয়েছে এখানে। বর্ধমানের মহারাজারা এখানে বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। অন্যতম হল ১০৮ শিবমন্দির। বর্ধমানের নবাবহাটের ১০৮ শিবমন্দিরের মন্দিরগুলি আছে আয়তাকারে সজ্জ্বিত। কিন্তু কালনার মন্দিরগুলি বৃত্তাকারে সজ্জ্বিত। মন্দিরটি দু’টি বৃত্তকে কেন্দ্র করে নির্মিত। বৃত্তের মধ্যের মন্দিরগুলি আটচালা। চারচালার উপরে ক্ষুদ্রাকৃতি আর একটি চারচালা। উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ন’ফুট। বাইরের বৃত্তে ৭৪টি মন্দিরে পর্যায়ক্রমে একটি সাদা এবং একটি কালো এবং ভিতরের বৃত্তের ৩৪টি মন্দিরের সবক’টিতেই সাদা শিবলিঙ্গ আছে।

পূর্বস্থলী চুপি চর: পূর্বস্থলীর চুপি চর কালনার পূর্বস্থলীর কাছে পাখিদের বিশেষ আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত। মূল ভাগীরথী থেকে বিচ্ছিন্ন এই চর ছাড়ি গঙ্গা নামেও বিখ্যাত। গঙ্গার প্রবাহপথ পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া প্রায় ৯ কিমি দীর্ঘ অশ্বক্ষুরাকৃতি এই হ্রদে নানা রঙের ও প্রজাতির পাখিদের সমাবেশ দেখা যায়। শীত পড়লেই সুদূর হিমালয়, মঙ্গোলিয়া, এমনকী ইউরোপ থেকে নানা প্রজাতির পাখি চুপি চরে ভিড় জমায়। হেডেড সোয়ামপেন, গ্রে হিরন, মোরহেন, রাঙামুড়ি, কমনকুট, গার্ডওয়াল, লেজার হুইসলিং ডাক, পাইড কিংফিশারের মতো পক্ষীরা রয়েছে সেই তালিকায়। লেকের আশেপাশে রয়েছে বহু ফলের বাগান।

Tourist places near Bardhaman. এছাড়াও, জেলা জুড়ে বছরভর নানা মেলা ও উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। কথায় বলে, ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’! জেলার প্রধান উৎসব হল দুর্গাপুজো। এছাড়া অন্যান্য উৎসবগুলি হল কালী পুজো, সরস্বতী পুজো, দোল, রথ-যাত্রা, রাখীবন্ধন, ইদ-উল-ফিতর, মহরম, বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, গুরুপুরব, বুদ্ধ পূর্ণিমা, মহাবীর জয়ন্তী, ধর্মরাজের গাজন, শিবের গাজন প্রভৃতি। এছাড়া পূর্ব বর্ধমান জেলায় সারা বছর অসংখ্য মেলা বসে। কেতুগ্রামের দধিয়ায় মকর সংক্রান্তির সময় এক মাসব্যাপী মেলা বসে। বাবলাডিহিতে মহা শিবরাত্রির সময় মেলা বসে। আউসগ্রাম থানার কৈরাপুরে রাম নবমীর সময় এক সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। চৈত্র মাসের শেষ দিনে শিবের গাজন উপলক্ষে করুইয়ে মেলা বসে। এছাড়া কাইগ্রাম কুসুমগ্রামে, নেরোদিঘি, কেতুগ্রামের সীতাহাটি সহ নানা জায়গায় বিভিন্ন উপলক্ষে মেলা বসে। জেলার এই মেলা ও উৎসব দেখতেও ভিন জেলা থেকে আসেন অনেকে। আশা করি একটা ধারণা পেয়ে গেলেন, Tourist places near Bardhaman সম্পর্কে। (ছবি ও তথ্যসূত্র: জেলা প্রশাসন)

আরও পড়ুন- পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours