কি মুশকিল! লোকটা ডাক্তার সেটা আগে জানতেন? আরে আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলছি।
নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা কিভাবে হবে তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছেন না বিশ্বের তাবড় তাবড় চিকিৎসকেরা। অথচ ট্রাম্প কবেই বলে দিয়েছেন, করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনই সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। আবার সেই ওষুধ ওদেশে খুব বেশি নেই। ভারতের কাছে হাত পেতেছেন তিনি। ভারত নিমরাজি বুঝে হুমকি দিতেও ছাড়েননি।
অথচ ম্যালেরিয়ার পুরনো ওষুধ হিসাবেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরিচিতি। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আমেরিকার সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিখ্যাত চিকিৎসক ও হোয়াইট হাউসের করোনা উপদেষ্টা ডাঃ অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, ‘‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনার সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে কতখানি সফল তা এখনও প্রমাণিত হয়নি।’’
আরও একধাপ এগিয়ে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ জেমস ফিলিপস বলেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের পরামর্শে আমেরিকানরা যদি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন খাওয়া শুরু করেন তাহলে স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। যে রোগে যে ওষুধ পরীক্ষিত নয়, তা আমরা ডাক্তাররা কখনওই খেতে বলবো না।’’
ট্রাম্প ওসব শুনতে নারাজ। যে কোনও বিষয় নিয়েই বিতর্ক তিনি খুব ভালোবাসেন। সে মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল তোলাই হোক বা করোনায় ডাক্তারি। এখন তিনি জেদ ধরেছেন, দেশে আরও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ মজুত করতে হবে।
পাবেন কোথায়? কেন, ভারত আছে তো। এই ক’দিন আগে তিনি সে’দেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে গিয়ে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গদগদ প্রশংসা করে গিয়েছেন! দিন দু’য়েক আগে তাই সটান ফোন করে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। একথা-সেকথার পরে বলে দেন, ‘‘খুব বিপদে পড়েছি মশাই। করোনায় যা মরক লেগেছে আমাদের দেশে, তাতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন যা আছে তাতে আর বেশিদিন চলবে না। কিছু পাঠান দেখি।’’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বোঝান, তাঁর দেশেও ওই ওষুধের ভীষণ দরকার। সেকথা মাথায় রেখে মাসখানেক আগেই ওই ওষুধ রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তখনকার মতো ফোন রেখে দেন ট্রাম্প।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই গজ গজ করে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন, ভারত ওষুধ না দিলে ফল ভুগতে হবে। প্রতিশোধ নেওয়া হবে। সুপার পাওয়ার আমেরিকার (যদিও চিনের মতে, করোনা নিয়ে ল্যাজেগোবরে দশা সে দেশের। সুপার পাওয়ার না ছাই!) প্রেসিডেন্টের হুমকি বলে কথা।
ভারতও আর দেরি না করে ‘মানবিকতার খাতিরে’ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রফতানির উপর থেকে আংশিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে দেরি করেনি।
তাহলে শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়ালো? দেশের তাবড় চিকিৎসকরা যাই বলুন, আমেরিকায় করোনা চিকিৎসার ‘প্রধান হাতুড়ে’ ট্রাম্পই কিন্তু শেষ কথা। তিনিই প্রেসক্রিপসেন করে দিচ্ছেন, কি ওষুধ দিতে হবে করোনা আক্রান্তদের। করোনা নিয়ে চিকিৎসকদের উপরে মাতব্বরি করার এমন মিল আমাদের দেশের কোনও নেতা-নেত্রীর মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন কি? নিশ্চয়ই পাচ্ছেন। উত্তরটা মনে মনেই রাখুন।
+ There are no comments
Add yours