খাটে না শুয়ে মেঝেতে কেন ঘুমান দক্ষিণ দিনাজপুরের পীরপালের বাসিন্দারা?
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করে রাখুন বিভিন্ন আপডেট পাওয়ার জন্য।
দুর্গাপুর দর্পণ, জয়দীপ মৈত্র, গঙ্গারামপুরঃ কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে ঘুমোন না দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরপাল গ্রামের বাসিন্দারা। কারওর খাটে শুতে ইচ্ছে হলে মাটির তৈরি খাট ব্যবহার করেন অথবা, মেঝেতে ঘুমান।
এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দে পীরপালের মাটিতে ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির দেহ সমাধিস্থ করা হয়। এরপর তিনি পীর রূপে আবির্ভূত হন বলে বিশ্বাস। বীর যোদ্ধাকে মাটিতে সমাধিস্থ করার পর থেকে গ্রামবাসীরা খাটে বা চৌকিতে ঘুমোলে নাকি তাঁদের স্বপ্নাদেশে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হতো! এই ভয়ে বিগত কয়েকশো বছর থেকে পীরপালের অধিকাংশ মানুষ চৌকি বা খাটে শোন না। আর কেউ যদি ঘুমোন, তাহলে সেই পরিবারের সকলে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীদের।
তবে ইতিহাসবিদের দাবি, বখতিয়ার খলজিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই গ্রামবাসীরা মাটিতে শোন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর, তপন কুশমন্ডিতে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে গঙ্গারামপুরের পীরপাল অন্যতম। বখতিয়ার খিলজি ১২০২ খ্রীষ্টাব্দে গৌড় দখল করেন। তিনি দেবকোট অর্থাৎ অধুনা গঙ্গারামপুরে নিজের রাজধানীর পত্তন করেন। তিব্বত ও কামরূপ অভিযান বিফল হলে বখতিয়ার খলজি দেবীকোটে ফিরে আসেন। পরাজয়ের গ্লানি, প্রজাদের বিদ্রোহ প্রভৃতি নানা কারণে বখতিয়ার খলজি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান। তাঁকে পীরপালে সমাধিস্থ করা হয়। তিনি বীরযোদ্ধা ছিলেন। তাই তিনি পীর রূপে আবির্ভূত হন বলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস। তারপর থেকে এলাকার বিশেষ করে বয়স্করা চৌকি বা খাটে ঘুমোন না।
আরও পড়ুন- ইতিহাসের হাতছানি- গড় পঞ্চকোট
এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন জেলার ইতিহাসবিদ সুমিত ঘোষ। তিনি জানান, বখতিয়ার খলজি যেহেতু বীরযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাঁকে সম্মান জানাতেই পীরপালের মানুষ মেঝেতে ঘুমোন। যেহেতু বীরযোদ্ধা বখতিয়ার খলজি পীরপালের মাটিতে শায়িত আছেন তাই গ্রামবাসীরা কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে ঘুমোন না। তবে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে কিছু কুসংস্কার আছে। পীরপালের প্রবীণ বাসিন্দা রাজেন রায় বলেন, ‘‘কয়েকশো বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে। চৌকি বা খাটে ঘুমোলে তাঁদের না কি স্বপ্নাদেশে ভয় দেখানো হয়। পরিবারের সকলে অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’ pix-wikipedia