প্রচন্ড গরমে পথ চলতি এক সভ্য একটু জল খেতে চাইছে গৃহস্থের দরজায় । বাড়ির গৃহিনী না শোনার ভান করে দরজা বন্ধ করেদিলেন।—– এমন চিত্র যদি কোনও সিনেমার পর্দায় ফুটে ওঠে , মন খারাপ করবেন না। পরিচালক হয়ত , জলের আসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে সচেতন করতে চাইছেন দর্শককে।
সেদিন আর বেশী দেরী নেই যেদিন চড়া দামে জল বিকোবে অন লাইনে । অন্তত রাষ্ট্রপতি যা বললেন অধিবেশন শুরুর দিনে (২০জুন), তাতে সেই দিন আর বেশী দেরী নেই।
”নীতি আয়োগ” এর সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যেভূ-গর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতের ২১টা বড় শহরের। চেন্নাই ,বেঙ্গালুরু, , গুরুগ্রাম ,রাজস্থানে এই সব শহরে শুরু হতে চলেছে হা হা কার । বাদ যাবে না রাজধানী দিল্লী ও। যে শহরগুলি আপত দৃষ্টিতে বেশী এগিয়ে , কর্মসংস্থান , তথাকথিত সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে সেই শহরগুলি তেই অশনি সংকেতের কথা শুনিয়েছে “নীতি আয়োগ”। তারা আরও জানিয়েছে আর ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষ জলের সমস্যায় ভুগবে। বহু বড় শহরে নদী ,জলাশয়, জঙ্গল সংকটে। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন ‘একুশ শতকের বড় চ্যালেঞ্জ জলসঙ্কট। ‘
এটা হয়ত ভাবছেন , সেটা কেমন করে হবে। তা আবার হয় নাকি। কিন্তু এটাই বাস্তব ।
প্রথমেই আসি বড় শহরে যেখানে কাজের সন্ধানে প্রতিদিন কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন । এক লহমায় বাড়ছে জলের চাহিদা। বড় শহরের জলের প্রধান উৎস নদী। নদীর জল পরিশ্রুত করতে প্রচুর অর্থ লাগে। সেই জল যখন বাড়ি বাড়ি পৌঁছায় সেটা ট্যাঙ্কে জমা হয়। আমাদের সচেতনতার চরম অভাব । তাই অপ্রয়োজনীয় পরিশ্রুত জল উপছে পরছে সেদিকে কারও নজর নেই। সরকারি ভাল্ব যদি নাই বা পাওয়া গেল । কত আর দাম একটা ভাল্ব তো নিজ উদ্যোগেই লাগানো যায়। কিন্তু জল বাবদ টাকা যখন দেওয়া হয় তখন জল উপছাবে বৈই কি। নদীর জল নালী পথে নষ্ট হচ্ছে।
আরও আছে, বাগানের গাছে জল দেওয়া ই হোক কিংবা গাড়ি ধোয়াই হোক জল সবই হয় ওই বহু টকা ব্যয়ে পরিশ্রুত নদীর জলে।
এছাড়া বাড়ির কাজে যারা সাহায্য করে তারাও ইচ্ছে মত জল নষ্ট করে।
শহরে নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরীর হিরিক বেশি। বাড়ি তৈরীতে পুরসভার জল ব্যবহার করা হয়। আর ফ্ল্যাট তৈরীর সময়ে মাটির নীচের জল। অনেক জায়গায় ফ্ল্যাটে লুকিয়ে মাটির তলার জল ব্যবহার করা হয়। ফলে মাটির তলার জলস্তরও দিন দিন কমছে।
গ্রামের দিকে আগে নলকূপ বা কূয়ার প্রচলন ছিল । বিশ্বায়নের হাত ধরে গ্রামে ও এখন পাম্পের ব্যবহার বেড়েছে। পাম্পের তোলা জল বেশী অপচয় হয়।
ফলে গ্রাম গুলিতেও জলস্তর দ্রুত নীচে চলে যাচ্ছে ।
এবার বোধহয় ভাবার সময় এসেছে। যে ,যে ভাবে পারে জলের অপচয় এক্ষনই বন্ধ করতে হবে। কাপড় কাঁচা জল দিয়ে উঠোন বা ব্যালকনি ধুতে হবে। যাদের সুযোগ আছে রান্না ঘরের জল সঞ্চিত করে গাছে দিন। ফ্ল্যাট গুলিতেও জল রিসাইকিলিং করে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। গাড়িও ধোয়া বন্ধ করে মুছে নিন। রাস্তার ধারে কল খোলা দেখলে বন্ধ করুন । প্রয়োজনে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা কল বন্ধ করুন।
প্রত্যেকের বাড়িতে যারা কাজে সাহায্য করে তাদের বোঝান যে জল কত মূল্যবান । তাদের পাড়াতেও জল নষ্ট হয় অনেক। শুধু সচেতনতার অভাবে। ওদেরও এই অভিযানে যুক্ত করুন। স্কুল কলেজে অফিস আদালতে আপনি উদ্যোগী হয়ে একটা প্ল্যাকাড লাগান। জল অপচয় বন্ধ হোক- এই মর্মে। পড়ুয়ারাও নিজেদের পাড়ায় স্কুলে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে ঝুলিয়ে দিন। যাতে এক ফোঁটা জলও নষ্ট না হয়।
সবাই মিলে শুরু করলে নিশ্চয়ই সাফল্য আসবেই।