অবসর পরিকল্পনা (Retirement planning)
Retirement planning. বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে অবসর পরিকল্পনার (Retirement planning) প্রায় কোনও গুরুত্ব নেই অধিকাংশের কাছে। তাঁরা সবাই স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলির জন্য পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই দূরদর্শীতা তাঁদের থাকে না যে ভবিষ্যৎ অবসর জীবন কীভাবে স্বচ্ছলভাবে কাটবে!
আপনি সে ভুল করবেন না। অবসর পরিকল্পনা নিয়ে আজই পরিকল্পনা ছকে নিন। প্রতি মাসে কী একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ অবসর পরিকল্পনার জন্য বিনিয়োগ করছেন? 6০ বছর বয়সে পৌঁছানোর সময় আপনি কী আপনার জন্য একটি যথেষ্ট বড় কর্পাস (corpus) তৈরি হয়ে যাবে যা আপনার অবসর পরবর্তী 30-40 বছর ধরে আপনাকে নিশ্চিন্তে রাখতে পারবে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে গেলেই আপনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।
Retirement planning. মনে রাখবেন, অবসর পরিকল্পনা মানে 80C ডিডাকশনের জন্য কিছু random policy কিনে ফেলা নয়, যেগুলির নামের সঙ্গে “retirement” শব্দটা রয়েছে! এগুলি আদতে প্রকৃত “অবসর পরিকল্পনা”র কথা ভেবে তৈরি করা হয় না। এগুলি শুধু অবসরের কথা বলে পণ্য বিক্রির কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
দেখা গিয়েছে মূলত ৫টি কারণ লোকেরা অবসর পরিকল্পনার কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবে না এবং বিনিয়োগ করে না। 1. প্রথম কারণ হল, জীবনের শুরু থেকে আমাদের শেখানো হয়, অন্যের অর্থাৎ বাবা-মা, সন্তান, আত্মীয়-পরিজন, স্বামী, স্ত্রী বা অন্যান্যদের প্রয়োজনের কথা ভাবতে। সবার সব প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নিজের কথা ভাবার অবকাশই থাকে না। আপনি যদি তাদের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাবেন, তাহলেই সবাই আপনার দিকে স্বার্থপর বলে আঙুল তুলবে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাড়ি-গাড়ি কেনা, সন্তানের পড়াশোনা এসব নিয়ে ভাবার আগে নিজের অবসরকালীন পরিস্থিতির কথা ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, সেই সময় কেউ পাশে না থাকার সম্ভাবনাই ষোলোআনা! আপনার সারা জীবন ত্যাগ স্বীকারের কোনও মূল্য সেদিন কেউ দেবে না।
2. দ্বিতীয় কারণ হল, চাকরি জীবনের প্রথম দিকে মনেই হয় না যে একদিন অবসর নিতে হবে। শুধু মনে হয়, সে তো এখন 30-35 বছর পরের কথা। তখনকার কথা ভেবে এখন কেন জীবনটা উপভোগ করব না! এই করতে করতে সবাই 40 বছরে পৌঁছে যায়। অনেকে তো আবার 50 বছরে গিয়ে উপলব্ধি করে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই যদিও আপনার অবসর অনেক দূরে, তবু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি অবসর পরিকল্পনার জন্য বিনিয়োগ শুরু করুন। আপনি শুরুর দিকে অন্যান্য বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে বলে অন্তত কিছু দিয়ে শুরু করুন এবং পরবর্তী জীবনে যখন আপনি 30 থেকে 40-এ চলে যান তখন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ান।
3. তৃতীয় কারণ হল, ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে অদূরদর্শিতা। আজ আপনি যা গত 10 বছর আগে আপনি কী সেটা ভাবতে পেরেছিলেন? ঠিক একই ভাবে 10-20 বছর পরে আপনার কি পরিস্থিতি হবে সেটাও আপনি ভাবতে পারছেন না আজ। ভবিষ্যৎ জীবন ভালো হবে না মন্দ তা এখনই বোঝা সম্ভব নয়। তাই অবসর পরিকল্পনা নিয়েও সুষ্পষ্ট ধারণা তৈরি হয় না। একটা বড় কর্পাস তৈরি করে না রাখলে অবসরের পরে জীবন ভালো ভাবে কাটবে কী করে? আজ প্রতি মাসের প্রথম দিনে মোবাইলে মেসেজ চলে আসছে, “Your salary XXXX amount has been credited in your account”। কিন্তু একদিন যে এই মেসেজ আসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে সেটা এখন থেকে না ভাবলে কী করে হবে? হতে পারে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না, হতে পারে আপনার সন্তান কেরিয়ারে সাফল্য পেল না বা হয়তো খেয়াল রাখল না আপনার, তখন? আপনার হাতের কাছে বহু মানুষকে আপনি খুঁজে পাবেন, যাঁরা সারা জীবন খুব সাফল্যের সঙ্গে কাটিয়ে এসেছেন এবং অর্থের অভাবে শেষ বয়স কেটেছে চরম দুর্দশায়। এটাই জীবনের চরম বাস্তবতা।
আরও পড়ুন- তাহলে জীবনে কত টাকা দরকার?
4. চতুর্থ কারণ হল, আপনার পর্যাপ্ত রোজগার নেই। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হিসাবে সংসার চালাতে হিমসিম দশা। কিন্তু একটা কথা কী জানেন? আপনাকে এর মধ্যে থেকেই অবসর জীবনের কথা ভাবতে হবে। তা না হলে একদিন দেখবেন, বছরগুলো সব পেরিয়ে গেল। বুড়ো বয়সে দেখবে কে? কেউ সাহায্য করবে না। তাই যা রোজগার করছেন সেখান থেকেই অবসর পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করে দিন। প্রথমে মাসে 500-1000 টাকা দিয়েই না হয় শুরু করুন। পরের দিকে সুযোগ এলে বাড়াবেন। কিন্তু দেরি না করে এখনই শুরু করুন। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, 30 বছর বয়সে কেউ যদি মাসে 10000 টাকা করে জমাতে শুরু করেন, 60 বছর বয়সে 4 কোটির সঞ্চয় হতে পারে।
5. পঞ্চম কারণ হল, বুড়ো বয়সে ছেলে-মেয়েরা দেখবে, এমন ধারণা। এটা একটা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। তাই এ’বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু আশপাশে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে, তাতে একটা বিষয় খুব পরিস্কার। দিন কাল বদলেছে। ছেলে-মেয়েরা বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে দেখবে, এটা প্রত্যাশিত। কিন্তু সব সময় প্রত্যাশিত সব কিছু কী প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়? হয় না। তাই শুধু এটুকু বলতে পারি, অন্যের উপরে, সে ছেলে-মেয়ে হলেও, নির্ভরশীলতা কমান। ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা আপনার কর্তব্য। কিন্তু তার বিনিময়ে রিটার্ন চাইবেন না। অবসর জীবনের পরিকল্পনা তাই সময় থাকতে করে ফেলুন। তা না হলে একদিন দেখবেন, সময় পেরিয়ে গেল কিন্তু কিছুই করা হল না। বৃদ্ধ বয়সে অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।